বক্তব্য রাখছেন আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মাদ
আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মাদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু একজন সফল রাষ্ট্রনায়কের পাশাপাশি শিশুদের কাছেও ছিলেন ভীষণ প্রিয় ব্যক্তিত্ব। শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর মমতা ছিল অপরিসীম। তিনি বিশ্বাস করতেন আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ; শিশুরাই তার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।
ভারতের ত্রিপুরায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সভায় এ কথা বলেন তিনি।
শুক্রবার (১৭ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টায় দূতালয় প্রাঙ্গণে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পুরো আয়োজন দুই পর্বে ভাগ করা হয়।
প্রথম পর্বে
সকাল ৭টা৩৫ মিনিটে জাতির পিতা, তার পরিবারের শাহাদতবরণকারী সদস্য ও মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের আত্মার মাগফিরাত এবং বাংলাদেশের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করা হয়।
সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়।
সকাল ৮টায় জাতির পিতার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ও কর্মধারার ওপর প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর সকাল ৯টায় শুরু হয় ত্রিপুরায় বসবাসরত বিভিন্ন বয়সী শিশু কিশোরদের অংশগ্রহণে তিন ক্যাটাগরিতে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।
সকাল ১০টায অফিস প্রাঙ্গণে সহকারী হাই কমিশনের পক্ষ থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
সকাল ১০টা৫ মিনিটে জাতির পিতা, তার পরিবারের শাহাদতবরণকারী সদস্য ও মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সকাল ১০টা ৬মিনিটে জাতির পিতার জন্মদিন উপলক্ষে আমন্ত্রিত অতিথি, সাংবাদিক, আগরতলা মিশনে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিশুদের নিয়ে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে জন্মদিনের কেক কাটা হয়।
এরপর সকাল ১০টা১০ মিনিটে দিবসের তাৎপর্য নিয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মিশনের সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মাদ। দিবসের তাৎপর্য এবং বঙ্গবন্ধুর ঘটনাবহুল জীবন ও আদর্শের ওপর আলোচনা করেন বাংলাদেশ থেকে আসা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য বদরুদ্দোজা মো. ফরহাদ হোসেন (সংগ্রাম), ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের যুব, ক্রীড়া, সমাজকল্যাণ ও শ্রম বিষয়ক মন্ত্রী টিংকু রায়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মৈত্রী সম্মাননা প্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব শ্রী স্বপন ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আশিষ কুমার বৈদ্য, ড. দেবব্রত দেবরায়, ড. মুজাহিদ রহমান, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অমিত ভৌমিক প্রমুখ।
সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মাদ ও আসা অতিথিরা তাদের বক্তব্যে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতা, ৩০ লাখ শহীদ, সম্ভ্রমহারা ২ লাখ মা বোন এবং জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। যাদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
সহকারী হাইকমিশনার বলেন, বঙ্গবন্ধু একজন সফল রাষ্ট্রনায়কের পাশাপাশি শিশুদের কাছেও ছিলেন ভীষণ প্রিয় ব্যক্তিত্ব। শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর মমতা ছিল অপরিসীম। তিনি বিশ্বাস করতেন আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ; শিশুরাই তার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। শিশুদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার নিমিত্তে ও শিশুদের সুরক্ষায় তিনি জাতিসংঘের শিশু সনদের ১৫ বছর আগে ১৯৭৪ সালে জাতীয় শিশু আইন প্রণয়ন করেন ও শিশু বিকাশ নিশ্চিত করতে প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেন। এজন্য তার জন্মদিনকে শিশুদের জন্য উৎসর্গ করে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে ১৭ মার্চকে ‘জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
বেলা ১০টা৪৫ মিনিটে বাংলাদেশ থেকে আসা শিশু শিল্পী এবং ত্রিপুরার শিশু শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আমন্ত্রিত দর্শক ও শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।
অনুষ্ঠান শেষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার হিসেবে এককালীন শিক্ষা বৃত্তি দেয়া হয়। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী সব শিশুকে সহকারী হাই কমিশনের পক্ষ থেকে সনদ দেয়া হয়। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মিশনের প্রথম সচিব মো. আল আমীন।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি, সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি, আগরতলা মিশনে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন বয়সী স্কুলের ছাত্রছাত্রীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যাহ্নভোজে আপ্যায়ন করা হয়।
দ্বিতীয় পর্বে
বিকেল ৫টায় জাতির পিতার জন্মদিন উপলক্ষে আগরতলাস্থ ‘অন্বেষা শিশু সুরক্ষা কেন্দ্র’এর শতাধিক অনাথ শিশুদের উপস্থিতিতে জাতির পিতার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন নিয়ে বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যা ৫টা১০ মিনিটে অনাথ শিশুদেরকে নিয়ে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যসহ অনুষ্ঠানের তাৎপর্য তুলে ধরেন ত্রিপুরা ভলান্টারি হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক ডা. শ্রীলেখা রায়।
সেখানে আরও বক্তব্য রাখেন বদরুদ্দোজা মো. ফরহাদ হোসেন (সংগ্রাম) এমপি, সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মাদ, প্রথম সচিব ও দূতালয় প্রধান মো. রেজাউল হক চৌধুরী এবং প্রথম সচিব মো. আল আমীন প্রমুখ।
অনুষ্ঠান শেষে অনাথ শিশুদের জন্য নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।