ছবি: সংগৃহীত
শিল্প খাতে গ্যাস সংকট তীব্র আকার নিয়েছে। বস্ত্র ও পোশাকসহ বেশির ভাগ শিল্পের উৎপাদন সক্ষমতা অর্ধেকে নেমে এসেছে। আমদানিনির্ভরতা বাড়লেও নিজস্ব গ্যাস উত্তোলনে পর্যাপ্ত গুরুত্ব না দেওয়াকে এ পরিস্থিতির কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় সরকার বিভিন্ন ব্লকে গ্যাস অনুসন্ধান জোরদার করতে ১০০ নতুন কূপ খননের পরিকল্পনা করেছে। এর অংশ হিসেবে কুমিল্লার শ্রীকাইল, পাবনার মোবারকপুর ও সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে আরও তিনটি নতুন কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) শ্রীকাইল ডিপ-১, মোবারকপুর ডিপ-১ এবং ফেঞ্চুগঞ্জ সাউথ-১—এই তিনটি অনুসন্ধান কূপ খননের জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১৩৬ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৯০৯ কোটি টাকা দেবে সরকার এবং অবশিষ্ট ২২৭ কোটি টাকা বহন করবে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্স। প্রকল্পটি ২০২৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন এই প্রকল্পসহ একনেক মোট ১৭টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে, যার মোট ব্যয় ১৫ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল ৯ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা, বিদেশি ঋণ ৫১০ কোটি এবং বাকি ৩৭৯ কোটি টাকা দেবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, সমাজকল্যাণ ও নারী-শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প ও গৃহায়ন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎ সড়ক ও রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ বন ও পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম এবং শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলের টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫৬ কোটি টাকা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের মানসম্পন্ন বীজ আলু উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ জোরদারকরণ প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনও অনুমোদন পেয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সোনাগাজীতে ২২০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে, যার ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের চারটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন-২০২৪-এ আহত বা কর্মক্ষমতা হারানো জুলাইযোদ্ধা পরিবারের জন্য ১৫৬০টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ এবং একই আন্দোলনের শহীদ পরিবারের জন্য ‘৩৬ জুলাই’ আবাসিক ফ্ল্যাট প্রকল্প। এই দুই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৪৪ কোটি ও ৭৬১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সচিবালয় ও সংশ্লিষ্ট আবাসিক এলাকাগুলোর জন্য অগ্নিনিরাপত্তা আধুনিকায়ন এবং সচিবালয়ে নতুন ২১ তলা অফিস ভবন নির্মাণ প্রকল্পও অনুমোদন হয়েছে। এ ছাড়া সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা এমআরটি লাইন-৬ এর তৃতীয় সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প ব্যয় কমানো হয়েছে ৭৭৬ কোটি টাকা।
অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে সিরাজগঞ্জ–রায়গঞ্জ (চান্দাইকোনা) সড়ককে চার লেনে উন্নীত করা, নারায়ণগঞ্জ গ্রিন অ্যান্ড রেজিলিয়েন্ট আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প, অটিজম ও এনডিডি সেবাদান কেন্দ্র প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধন, জাপান হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট স্কলারশিপ এবং ডিজিটাল উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবন ইকোসিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম সংশোধন। এছাড়া নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় একাডেমিক ও কেন্দ্রীয় গবেষণাগারসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প, ক্লাইমেট রেসপন্স রিপ্রোডাকটিভ হেলথ অ্যান্ড পপুলেশন সার্ভিস ইমপ্রুভমেন্ট এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের জরুরি কার্যক্রম বাস্তবায়ন প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



