ছবি: সংগৃহীত
রাষ্ট্রীয় রাজস্ব ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ দুটি দায়িত্বে থাকা দুই সাবেক ও বর্তমান কর কর্মকর্তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনেই সোমবার (১৭ নভেম্বর) ঢাকার মহানগর সিনিয়র বিশেষ জজ আদালত এ নির্দেশ দেন। নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তিরা হলেন—ঢাকার কর অঞ্চল–৩-এর কমিশনার এম এম ফজলুল হক এবং রংপুর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুর রশিদ মিয়া। দুজনই বর্তমানে দুর্নীতি অনুসন্ধানের আওতায় রয়েছেন, এবং তদন্তের স্বার্থে তাদের বিদেশে যাত্রা বন্ধ করা জরুরি বলে মত দিয়েছে দুদক।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, দুদকের পৃথক দুটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত দেন। আদালতের বিচারক সাব্বির ফয়েজ আবেদনদ্বয়ের শুনানি গ্রহণ করে বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে মঞ্জুর করেন। প্রতিটি মামলাতেই দুদক উল্লেখ করেছে যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সম্পদ বিবরণী যাচাই, প্রকৃত সম্পদের উৎস অনুসন্ধান এবং সম্ভাব্য অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ সংগ্রহের কাজ চলমান। এই পর্যায়ে কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত জটিল হয়ে পড়বে এবং রাষ্ট্রীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দুদকের আবেদনপত্রে আরও বলা হয়, অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো গুরুতর ধরনের। তাদের দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাই করে দেখা গেছে, ঘোষিত সম্পদের সঙ্গে বাস্তবে অর্জিত সম্পদের সম্ভাব্য অমিল রয়েছে। এই অমিলের উৎস অনুসন্ধান করতে গিয়ে দুদকের তদন্ত টিম বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি-তথ্য সংগ্রহ করেছে, যেগুলোর ভিত্তিতে গভীরতর অনুসন্ধান প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে যদি অভিযুক্তরা দেশ ত্যাগ করেন, তাহলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ, তথ্য গ্রহণ কিংবা মুখোমুখি জেরা করা অসম্ভব হয়ে যাবে। এমন ঝুঁকি এড়ানোর জন্যই আদালতে দ্রুত দেশের বাইরে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করা হয়।
দুদকের আবেদনে উল্লেখ করা হয়, গোপন সূত্রে এবং বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে—অভিযুক্তদের মধ্যে কেউ কেউ বিদেশে অবস্থানরত ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং তদন্ত শুরুর পর থেকেই বিদেশে পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে সন্দেহ রয়েছে। এসব তথ্য আদালতে উপস্থাপন করার পর বিচারক মনে করেন, তদন্তের স্বার্থে তাদের বিদেশযাত্রা নিষিদ্ধ করা জরুরি এবং যুক্তিযুক্ত। তাই আদালত দুদকের আবেদন মঞ্জুর করেন এবং আইনগতভাবে তাদের নামে ইমিগ্রেশন পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে নিষেধাজ্ঞার আদেশ পাঠানোর নির্দেশ দেন।
নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় এখন থেকে এম এম ফজলুল হক ও আব্দুর রশিদ মিয়া দেশের যেকোনো স্থানের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও নৌবন্দর দিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন না। দুদক সূত্র জানায়, তাদের বিরুদ্ধে সম্পদ অনুসন্ধানের অগ্রগতি ইতোমধ্যে চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে এবং অনুসন্ধান দল শিগগিরই তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মতে, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলে দ্রুত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা জরুরি—কারণ অতীতে বহু অভিযুক্ত বিদেশে পালিয়ে গিয়ে তদন্ত এড়িয়েছে, যার কারণে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি তদন্তে ধীরগতি দেখা গেছে। সর্বশেষ এই দুই কর্মকর্তার ক্ষেত্রে আদালতের নিষেধাজ্ঞা সেই ধরনের ঝুঁকি আগেই প্রতিরোধ করবে।
আদালত সূত্র বলছে, এই মামলা দুটির নজরদারি বর্তমানে অগ্রাধিকার পর্যায়ে রাখা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অর্থ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পদে থেকে অনিয়ম বা দুর্নীতি করলে তা জনস্বার্থের বিরুদ্ধে যায়, এবং এমন অভিযোগের তদন্ত সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে। দুদকও জানিয়েছে, অনুসন্ধান শেষ হলে প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে এবং প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাষ্ট্রীয় রাজস্ব খাতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সম্পদ অনুসন্ধানের ঘটনা ইতোমধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বিষয়টি আরও তীব্রভাবে জনদৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এখন দেখার বিষয়—তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের তথ্য উঠে আসে এবং দুদক পরবর্তী ধাপে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
বাংলাবার্তা/এসজে
.png)
.png)
.png)



