ছবি: সংগৃহীত
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলে সাজা পরোয়ানা জারির আবেদন করা হবে। এ আবেদন করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রোসিকিউটর কার্যালয় প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন প্রোসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা যেটা করব সেটা হলো, যে দুজন আসামি পলাতক (শেখ হাসিনা ও কামাল) আছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কপিসহ রেড নোটিশ জারির আবেদন করা আছে (ইন্টারপোলে) আমাদের।
সেটাকে এখন মডিফাই (সংশোধন) করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বদলে একটি কনভিকশন ওয়ারেন্ট বা সাজার পরোয়ানামূলে তাঁদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে আরেকটি নোটিশ জারির জন্য আবেদন করব। এটি আমরা করব এবং এর কাজ অলরেডি আমরা প্রোসিকিউশন থেকে শুরু করেছি।’
আবেদনের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এই প্রোসিকিউটর বলেন, ‘চিফ প্রোসিকিউটর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে এটি (আবেদন) ফরেন মিনিস্ট্রিকে পাঠানো হবে। ফরেন মিনিস্ট্রির মাধ্যমে এটি ইন্টারপোলে যাবে।
আমাদের কাজ শুরু হয়ে গেছে। জাজমেন্ট হাতে পেলেই আমরা এটি (সাজা পরোয়ানা জারির আবেদন) পাঠিয়ে দেব।’
গত সোমবার যে মামলার রায় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল, এই মামলায় গত বছর ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। সেদিন আরেকটি মিসকেস (বিবিধ) মামলায় আরো ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
এই ৪৫ জনের মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও ছিলেন। এই পরোয়ানা জারির পর গত বছর ১০ নভেম্বর শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করে চিফ প্রোসিকিউটর কার্যালয়। এরপর চলতি বছর ১০ এপ্রিল মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক আরো ১০ আসামিকে ধরতে ইন্টারপোলকে ‘রেড নোটিশ’ জারির অনুরোধ জানিয়ে সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেয় চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়।
ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখা গেছে, ১৯৬টি দেশ এই বৈশ্বিক সংস্থাটির সদস্য। বাংলাদেশ সদস্য হয়েছে ১৯৭৬ সালে।
ইন্টারপোলের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বা তথ্য আদান-প্রদান হয় সংস্থাটির ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) মাধ্যমে। প্রত্যেক সদস্য দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যুক্ত থাকে এনসিবির মাধ্যমে। কোনো আসামির বিরুদ্ধে পরোয়ানা থাকলে সেই আসামিকে ধরতে এনসিবির মাধ্যমে রেড নোটিশ জারির অনুরোধ পাঠাতে হয়। প্রত্যেক সদস্য দেশেই এনসিবির দপ্তর রয়েছে। পদাধিকারবলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এনসিবিরও প্রধান।
কোথায় পাঠানো হবে এবং কে কে পাবেন রায়ের অনুলিপি
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত সোমবার যে রায় দিয়েছেন, সে রায়ের আদেশ (সাজা এবং সম্পদ বাজেয়াপ্ত) বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অর্থাৎ জেলা প্রশাসককে রায়ের অনুলিপি সরবরাহ করতে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। বিনা খরচে রায়ের একটি অনুলিপি দণ্ডিত সাবেক আইজিপি মামুনকেও দিতে বলা হয়।
প্রোসিকিউটর তামীমের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান, কোথায় কবে রায়ের অনুলিপি পাঠানো হবে? জবাবে তামীম বলেন, ‘আপনারা জানেন, গত সোমবার পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রথম রায় প্রদান করেছেন। এই রায়ের শেষ প্যারায় উল্লেখ আছে, রায়ের একটি সার্টিফায়েড কপি (প্রত্যায়িত অনুলিপি, যাতে ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের স্বাক্ষর থাকে) প্রসিকিউশন পাবে এবং একটি সার্টিফায়েড কপি এই মামলার যে আসামি উপস্থিত ছিলেন তিনি পাবেন এবং যে আসামিরা পলাতক আছেন তাঁরা যদি ৩০ দিনের মধ্যে সারেন্ডার (আত্মসমর্পণ) করেন অথবা গ্রেপ্তার হন তাহলে তাঁরাও এই রায়ের একটি সার্টিফায়েড কপি পাবেন ফ্রি অব কস্ট (বিনা খরচে)। আরেকটি কথা, ট্রাইব্যুনাল বলে দিয়েছেন, এই রায়ের আরেকটি কপি ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে, মানে ঢাকার জেলা প্রশাসক যিনি অ্যাজ ওয়েল অ্যাজ (একই সঙ্গে) ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট, উনার কাছে ফর কমপ্লায়েন্সের (রায়ের আদেশ বাস্তবায়ন) জন্য যাবে।’
কবে যাবে, জানতে চাইলে তামীম বলেন, ‘এটা রায় প্রস্তুতি সাপেক্ষে। রায় তো সোমবার প্রদান করা হয়েছে। এখন এই রয়ের কিছু অফিশিয়াল কার্যক্রম থাকে। সেগুলো সম্পন্ন হলেই রায়গুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে চলে যাবে।’
ট্রাইব্যুনালের রায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা অন্য কোথাও পাঠানোর বাধ্যবাধকতা বা নিয়ম আছে কি না, জানতে চাইলে প্রোসিকিউটর তামীম বলেন, ‘না। এই রায় তিনটি জায়গায় যাবে। একটি হলো প্রসিকিউশন অফিস, একটি হলো উপস্থিত আসামির কাছে আর একটি হলো ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে। এই তিনটি জায়গা ছাড়া আর কোথাও এই রায় যাবে না।’
জুলাই গণ-আন্দোলনে প্ররোচনা, উসকানি, হত্যার নির্দেশ ও হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত সোমবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ছয়টি অপরাধমূলক ঘটনার দুটি অভিযোগে আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করে এই রায় দেওয়া হয়। রায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবার এবং শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত আন্দোলনকারীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয় রায়ে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



