
ছবি: সংগৃহীত
জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে মঙ্গলবারের জঙ্গি হামলা ভারতের জাতীয় অনুভূতিতে গভীর আঘাত হেনেছে। এই বর্বরোচিত হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন নিহত এবং আরও অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। বেসামরিক জনগণের ওপর এমন নিষ্ঠুর হামলার ঘটনায় শোকাহত গোটা ভারত। এমন পরিস্থিতিতে ক্রীড়াঙ্গনও থেকেছে না বিচ্ছিন্ন—ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘরোয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) এই ঘটনার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং নিহতদের স্মরণে আজকের ম্যাচে তিনটি নিয়মে পরিবর্তন এনেছে।
আজ রাত ৮টায় হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। তবে প্রতিযোগিতার উত্তেজনা কিংবা বিনোদনের বাহার নয়, ম্যাচের শুরুতে থাকবে এক ভিন্ন আবহ। শোক, শ্রদ্ধা ও নীরবতায় শুরু হবে আইপিএলের এই ম্যাচ।
এক মিনিট নীরবতা ও কালো আর্মব্যান্ড
পেহেলগামের বেদনাদায়ক ঘটনার প্রতি সম্মান জানিয়ে ম্যাচ শুরুর আগে পুরো স্টেডিয়ামে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। এই সময় মাঠে থাকা খেলোয়াড়, ম্যাচ অফিসিয়াল এবং দর্শকরাও দাঁড়িয়ে থাকবেন শ্রদ্ধার চিহ্ন স্বরূপ। এছাড়াও সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স দলের সকল খেলোয়াড় আজ মাঠে নামবেন কালো আর্মব্যান্ড পরে। আর্মব্যান্ড পরবেন আম্পায়াররাও। এই কালো ব্যান্ড শুধু খেলোয়াড়দের বাহুতে নয়, প্রতীক হবে জাতীয় শোক এবং সহানুভূতির।
চিয়ারলিডার থাকবে না মাঠে
আইপিএল মানেই রঙিন উৎসব, বাউন্ডারি-ছক্কায় চিয়ারলিডারদের নৃত্য, গ্যালারিতে আনন্দের ঢেউ। তবে আজকের ম্যাচে সেই চেনা দৃশ্য থেকে বেরিয়ে এসেছে আইপিএল কর্তৃপক্ষ। এই ম্যাচে চিয়ারলিডারদের উপস্থিতি থাকবে না। চার-ছক্কা কিংবা উইকেট পড়লেও থাকবে না তাদের উল্লাস। চিয়ারলিডারদের অনুপস্থিতিই হবে এই হামলার বিরুদ্ধে আইপিএলের মৌন প্রতিবাদ।
বাজি ও আলোর প্রদর্শনী বাতিল
আইপিএলে দুই ইনিংসের মাঝখানে এবং ম্যাচের পরপরই থাকে দৃষ্টিনন্দন আলোর খেলা, লেজার শো এবং আতশবাজির ঝলক। কিন্তু পেহেলগামের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজকের ম্যাচে এ ধরনের বিনোদনমূলক উপাদান বাতিল করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। পুরো ম্যাচ জুড়েই থাকবে এক ধরনের গাম্ভীর্য, উৎসবের বদলে থাকবে প্রার্থনার আবহ।
এই সিদ্ধান্তে আইপিএল বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এক বিবৃতিতে জানান, “আমরা মনে করি, খেলাধুলারও একটা নৈতিক অবস্থান থাকা উচিত। পেহেলগামের ঘটনার শোক আমরা শুধু কাগজে নয়, মাঠের আচরণেও প্রকাশ করতে চাই।”
ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে, সেটি শুধু সংসদ, সংবাদমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ক্রিকেটাররাও নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আইপিএলে অংশ নেওয়া একাধিক খেলোয়াড় সামাজিক মাধ্যমে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
অধিনায়ক রোহিত শর্মা এক টুইট বার্তায় লেখেন, “এই দুঃসময়ে নিহতদের পরিবারের পাশে আছি। ক্রিকেট খেললেও আজ হৃদয় ভারাক্রান্ত।”
একইভাবে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের পেসার ভুবনেশ্বর কুমার বলেন, “আজকের ম্যাচটা যেন জয়ের জন্য নয়, জাতির প্রতি সম্মান জানাতে খেলা।”
পেহেলগামে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাই নয়, এটি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা ও মানবতার ওপর সরাসরি আঘাত। এর প্রতিবাদে যখন রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্ল্যাটফর্মগুলো সক্রিয়, তখন ক্রীড়াঙ্গনের শোক ও প্রতিবাদ নতুন করে বুঝিয়ে দিল—খেলাধুলাও শুধু বিনোদনের বাহন নয়, বরং জাতির আবেগ, সম্মান এবং সংবেদনশীলতার প্রতিচ্ছবি।
আজকের ম্যাচটা তাই শুধুই বল-ব্যাটের প্রতিযোগিতা নয়, বরং ক্রিকেটের মাধ্যমে একটি জাতীয় দায়িত্ব পালনের দিন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ