
ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণাঞ্চলে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর মুখ্য সংগঠক ও সামাজিক অঙ্গনে পরিচিত মুখ হাসনাত আব্দুল্লাহ অংশ নিয়েছেন কুমিল্লার দেবিদ্বারে আয়োজিত ব্যতিক্রমধর্মী এক ঈদ উৎসবে, যেখানে একত্রে চার হাজার মানুষের জন্য আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য মেজবানি। এই উৎসব শুধু খাবার নয়, ছিল মানুষের মিলনমেলা, হৃদ্যতার বন্ধন এবং নবীন-প্রবীণের এক আনন্দঘন সম্মিলন।
রবিবার (৮ জুন) দেবিদ্বার পৌর মিলনায়তনে এই বৃহৎ মেজবানের আয়োজন করে নবগঠিত সামাজিক সংগঠন 'ইনসাফ'। সংগঠনের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয় ‘নবীন-প্রবীণের ঈদ উৎসব’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। আয়োজনটি শুধু একটি সামাজিক কার্যক্রম ছিল না, বরং ছিল দেবিদ্বারের রাজনৈতিক ও সামাজিক সম্প্রীতির একটি অনন্য উদাহরণ, যেখানে দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ মিলিত হন এক টেবিলে।
দেবিদ্বার পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড ছাড়াও আশপাশের গ্রামের মানুষও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন এই ঈদ মেজবানে। আয়োজকদের দাবি অনুযায়ী, প্রায় চার হাজার মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। সকাল থেকেই পৌর মিলনায়তন চত্বর ছিল মানুষের পদচারণায় মুখরিত। কেউ এসেছেন পরিবার নিয়ে, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে, আবার কেউবা এসেছেন একা, কিন্তু কাউকেই একা মনে হয়নি এই উন্মুক্ত আয়োজনের আন্তরিক পরিবেশে।
মেজবানের খাবারে ছিল ঐতিহ্যবাহী পোলাও, গরুর মাংস, মুরগি, ডাল ও বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন। খাবারের পরিবেশনা ছিল সুসংগঠিত, শৃঙ্খলাপূর্ণ এবং সবার জন্য সমানভাবে উন্মুক্ত।
মেজবানের সূচনা হয় দেবিদ্বার মডেল মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতি আব্দুল আহাদ-এর দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে। সেখানে দেশ, জাতি, মুসলিম উম্মাহ এবং আয়োজকদের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় মেজবানি খাবার পরিবেশন।
এদিন দেবিদ্বারে আগত অতিথিদের মধ্যে বিশেষভাবে নজর কাড়েন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি শুধুমাত্র রাজনীতিক হিসেবে নয়, বরং একজন জনপ্রিয় সাংগঠনিক ব্যক্তিত্ব হিসেবেই গণমানুষের কাছে পরিচিত। এদিন তাঁর শৈশবের ও ছাত্রজীবনের শত শত সহপাঠীও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, যার ফলে অনুষ্ঠানটি রূপ নেয় এক অনন্য পুনর্মিলনী উৎসবে।
তিনি সবার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন, শিশুদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলেন, প্রবীণদের খোঁজখবর নেন এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে একই সারিতে বসে মেজবানি খান। উপস্থিত জনতার অনেকে তাঁকে ঘিরে রাখেন স্মৃতিময় ছবি তুলতে ও শুভেচ্ছা জানাতে।
এই বিশাল আয়োজনের পেছনে ছিল সদ্য আত্মপ্রকাশকারী সামাজিক সংগঠন ইনসাফ। সংগঠনটির উদ্যোগে এমন বড়সড় আয়োজন এক নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। মেজবানের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধানে ছিলেন ইনসাফের উদ্যোক্তা আহমেদ শুভ, মোহাম্মদ আল আমিন সরকার, মির্জা মোহাম্মদ শাকিল, আজারুল হক, সিয়াম সরকার ও সাকিব। এদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ সমাজকর্মী, যারা নিজেদের অবস্থান থেকে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান।
তাঁদের ভাষায়, “আমরা চাই ঈদের আনন্দ সবার মাঝে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ুক। এই মেজবানের মাধ্যমে আমরা সম্প্রীতির বার্তা দিতে চেয়েছি। নবীন ও প্রবীণের মেলবন্ধনের মাধ্যমে সমাজে ভালোবাসা ও ঐক্যের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চাই।”
এই মেজবান অনুষ্ঠানে দলমত নির্বিশেষে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা, সাংবাদিক, শিক্ষক, পেশাজীবী, দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। আয়োজনটি শুধুমাত্র একটি ঈদের খাবারের অনুষ্ঠান নয়, বরং এক সামাজিক বার্তার প্রতীক— যেখানে শ্রেণি, মত, দল ও বয়স—সব ভেদাভেদ ভুলে মানুষ একত্র হয় উৎসব ভাগ করে নিতে।
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আজকের এই আয়োজন শুধু খাবারের উৎসব নয়, এটা একটা সামাজিক বন্ধনের দৃষ্টান্ত। আমরা যদি সবাই একত্রে আনন্দ ভাগ করে নিতে পারি, তবে সমাজে বিভেদ থাকবে না। ইনসাফের মতো তরুণদের এ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়, আমি সবসময় তাদের পাশে আছি।”
তিনি আরও বলেন, “দেবিদ্বার আমার শৈশবের স্মৃতিময় জায়গা। আজ এখানকার মানুষজনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগ করে নিতে পেরে আমি আনন্দিত ও গর্বিত।”
এমন এক সময়, যখন রাজনীতি ও সমাজে বিভাজন দিন দিন বাড়ছে, তখন দেবিদ্বারের এই চার হাজার মানুষের মেজবান আয়োজন এক নবতর বার্তা দেয়— সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও সহমর্মিতার। ইনসাফ নামের তরুণ সংগঠনটির প্রথম উদ্যোগেই এতো বড় ও সফল এক আয়োজন প্রমাণ করে দেয়—ইচ্ছা থাকলে ছোট পরিসর থেকেও বড় কিছু করা সম্ভব। আর সেই উদ্যোগে যখন নেতৃত্ব দেন হাসনাত আব্দুল্লাহর মতো সমাজপ্রেমী ব্যক্তিত্ব, তখন তা হয়ে ওঠে আরও তাৎপর্যপূর্ণ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ