ছবি: সংগৃহীত
দেশবাসী দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার স্লোগান শুনে আসছে। সরকারের পক্ষেও ‘অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই)’ নামে একটি প্রকল্প চালু রয়েছে, এবং বেসরকারি খাতেও বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবু দেশের ৪৩.৯৮ শতাংশ পরিবার এখনও ইন্টারনেটের বাইরে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর জরিপ অনুযায়ী, দেশে ৫৬.২ শতাংশ পরিবার ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, যার মধ্যে গ্রামাঞ্চলে হার ৫১.৫ শতাংশ এবং শহরে ৬৪ শতাংশ।
‘ব্যক্তি ও খানা পর্যায়ে জেলাভিত্তিক আইসিটি ব্যবহারের সুযোগ ও প্রয়োগ পরিমাপ’ প্রকল্পের আওতায় পাঁচ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের ওপর এই জরিপ পরিচালনা করে বিবিএস। এতে পরিবারগুলোয় মোবাইল ফোন, ফিক্সড ফোন, টেলিভিশন, রেডিও ও কম্পিউটার ব্যবহারের চিত্রও উঠে আসে।
জরিপের ফলাফল দেখাচ্ছে, দেশে ব্যক্তি ও পারিবারিক পর্যায়ে মোবাইল ফোনের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে টেলিভিশন, কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের ব্যবহার, তবে স্মার্টফোন ও রেডিওর ব্যবহার কমেছে। ‘আইসিটি প্রয়োগ ও ব্যবহার জরিপ’-এ পাঁচ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী ব্যক্তিদের এবং শহর-পল্লি অঞ্চল অনুযায়ী জাতীয় পর্যায়ের আইসিটির সূচকসমূহ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে তৈরি করা হয়। সারা দেশে ২,৫৬৮টি নির্বাচিত নমুনা এলাকায় দৈবচয়ন পদ্ধতিতে ৬১,৬৩২টি খানায় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
জরিপের বিষয়ে বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, জরিপের খানা ও ব্যক্তি পর্যায়ে আইসিটির সূচকগুলো আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) আলোকে নেওয়া হয়েছে। জরিপে খানায় রেডিও, টেলিভিশন, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, স্মার্টফোন, ইন্টারনেটের এক্সেস এবং ব্যক্তি পর্যায়ে মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেটের ব্যবহার, মোবাইল ফোনের মালিকানার ফলাফল প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, দেশের অনেক মানুষ ডিজিটাল সেবার বাইরে। এই জরিপে বিকাশ, নগদসহ মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) এর আওতায় আনা হলে পরিসংখ্যান হয়তো পাল্টাবে। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, সচেতনতার অভাবে এখনো অর্ধেক মানুষ ডিজিটাল সিস্টেমের আওতার বাইরে রয়েছে, যাদের বেশির ভাগ গ্রামাঞ্চল এবং পার্বত্য এলাকার। তারা ডিজিটাল সেবাকে ভয় পায়।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ৯৮ দশমিক ৯ শতাংশ পরিবারে অন্তত একটি মোবাইল ফোন ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে ৭২ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবারে রয়েছে স্মার্টফোন। স্মার্টফোন ব্যবহারে শহরাঞ্চল এগিয়ে। শহরে ৮০ দশমিক ৮ শতাংশ এবং গ্রামে ৬৮ দশমিক ৮ শতাংশ পরিবার স্মার্টফোন ব্যবহার করে। এ ছাড়া ফিক্সড ফোন ব্যবহার করে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ পরিবার। কম্পিউটার ব্যবহার করে ৯ দশমিক ১ শতাংশ পরিবার। আর ৫৬ দশমিক ২ শতাংশ পরিবার ইন্টারনেট ব্যবহার করে।
জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৫৮.৯ শতাংশ পরিবারে টেলিভিশন দেখা হয় এবং ১৫.১ শতাংশ পরিবার রেডিও ব্যবহার করে। বিদ্যুৎ সুবিধা আছে ৯৮.৯ শতাংশ পরিবারে।২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে দেশের ৯৮.৮ শতাংশ পরিবারের অন্তত একজন মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে স্মার্টফোনের ব্যবহার ছিল ৭২.৮ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে মোবাইল ফোন ব্যবহার ১ শতাংশ বেড়েছে, তবে স্মার্টফোনের ব্যবহার ০.৪ শতাংশ কমেছে। ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে পারিবারিকভাবে কম্পিউটার ব্যবহারকারীর হার ছিল ১৫.৩ শতাংশ, যা বর্তমানে ১৫.১ শতাংশে নেমেছে। গ্রাম-শহরভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, গ্রামে ১৪ শতাংশ পরিবার রেডিও ব্যবহার করছে, শহরে এই হার ১৭.৭ শতাংশ।
জরিপের ব্যক্তি পর্যায়ের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে ৮০.৬ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছে, যা এক বছর আগে ৭৮.৯ শতাংশ ছিল। অর্থাৎ এক বছরে মোবাইল ব্যবহারকারীর হার ১.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ব্যবহারকারীর হার ৮০.৯ শতাংশ, নারী ব্যবহারকারীর ৭৮.৮ শতাংশ। তবে ব্যক্তিমালিকানাধীন মোবাইল ফোনের ব্যবহার কিছুটা কমেছে; ২০২৪ সালে যেখানে হার ছিল ৫৭.৫ শতাংশ, ২০২৫ সালে তা ৫৬.৫ শতাংশে নেমেছে। কম্পিউটার ব্যবহারের হার সামান্য কমে ১০.১ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নেমেছে। বিপরীতে, ব্যক্তি পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে। ২০২৪ সালে যেখানে হার ছিল ৪৭.৮ শতাংশ, ২০২৫ সালে তা বেড়ে ৪৮.৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে ৫১.২ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৬.৩ শতাংশ নারী।
বিবিএস জানায়, এই জরিপের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পরিমাপ এবং আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) জন্য আইসিটি সূচক সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



