ছবি: সংগৃহীত
হেলথ অ্যান্ড মরবিডিটি স্ট্যাটাস সার্ভে (এইচএমএসএস) ২০২৫–এর তথ্য অনুযায়ী, জরিপের আগের ৯০ দিনে দেশে প্রতি হাজারে ৩৩২ জন—অর্থাৎ ৩৩ শতাংশ মানুষ—অসুস্থ ছিলেন। পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে অসুস্থতার হার বেশি পাওয়া গেছে। রোববার (৩০ নভেম্বর) ঢাকার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) অডিটোরিয়ামে জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আখতার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ হজুর আলী। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
জরিপে দেখা গেছে, পল্লী এলাকায় প্রতি হাজারে অসুস্থতার হার ৩৩৩.৩০ এবং শহরে ৩৩১.০৪ জন। নারীদের মধ্যে অসুস্থতার হার প্রতি হাজারে ৩৫৪.৬ জন, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে তা ৩০৯.২ জন। দশটি সাধারণ রোগের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ—প্রতি হাজারে ৭৮.২৮ জন। এরপর রয়েছে পেপটিক আলসার, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, চর্মরোগ, হৃদরোগ, হাঁপানি, অস্টিওপোরোসিস, হেপাটাইটিস এবং ডায়রিয়া।
গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অসুস্থতার হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে প্রতি হাজারে অসুস্থতার সংখ্যা যেখানে ২৩২ জন, সেখানে ৭৫–৭৯ বছর বয়সীদের মধ্যে তা বেড়ে হয়েছে ৭৪৪ জন। জরিপের আগের তিন মাসে ব্যক্তিপ্রতি গড় চিকিৎসা ব্যয় ছিল ২,৪৮৭ টাকা। এর মধ্যে নারীদের ব্যয় (২,৫৭৬ টাকা) পুরুষদের (২,৩৮৭ টাকা) তুলনায় বেশি। চিকিৎসা গ্রহণে মানুষ এখনো অনানুষ্ঠানিক খাতের ওপর বেশি নির্ভরশীল—উত্তরদাতাদের ৫১.২ শতাংশ ফার্মেসি বা স্ব–চিকিৎসার পথ বেছে নিয়েছেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিয়েছেন মাত্র ১১.৫ শতাংশ, আর প্রায় ২০ শতাংশ সেবা নিয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।
১৫–৪৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে সিজারিয়ান প্রসবের হার জাতীয়ভাবে ৪৯.৩ শতাংশ। শহরে এ হার ৫৩.৩ শতাংশ, পল্লীতে ৪৮.১ শতাংশ। প্রসবপ্রতি গড় ব্যয় ২২,৬৫৫ টাকা; এর মধ্যে গর্ভকালীন সেবায় ব্যয় ৫,৬৫৮ টাকা এবং প্রসব ব্যয়ে ১৩,০৬০ টাকা। শহরে গড়ে ব্যয় ২৬,৩৬০ টাকা, পল্লীতে ২১,৫৫৪ টাকা।
জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ১০০ জনে ৫.২ জন শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী। শহরে হার ৫.৬ শতাংশ, আর ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে তা বেড়ে ৭.১ শতাংশ।প্রতিবন্ধকতা-সম্পর্কিত গড় চিকিৎসা ব্যয় পল্লীতে ৭,২৬৯ টাকা এবং শহরে ৫,৪১৭ টাকা। ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে তামাক সেবনের হার ২৬.৭ শতাংশ—পল্লীতে ২৬.৭ শতাংশ, শহরে ২৪.১ শতাংশ। পুরুষদের মধ্যে হার ৩৭.৯ শতাংশ, নারীদের ১৬.৫ শতাংশ। মাদকদ্রব্য সেবনের হার ০.৮ শতাংশ হলেও ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি—শহরে মাসে গড়ে ১,৪২৭ টাকা, পল্লীতে ৫৫৬ টাকা।
উপস্থাপনা শেষে উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা স্বাস্থ্যখাতে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় আরও জোরদারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তাঁদের মতে, এইচএমএসএস–২০২৫-এর তথ্য জাতীয় বাজেট বরাদ্দ, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির নকশা, স্থানীয় পর্যায়ের পরিকল্পনা এবং এসডিজি পরিবীক্ষণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



