
ছবি: সংগৃহীত
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু বিতর্কিত ও বিকৃত ছবি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছেন ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান। নানান প্ল্যাটফর্মে কিছু ছবিতে সাদিয়া আয়মানের নাম জুড়ে দিয়ে প্রচার করা হয়েছে এমন একাধিক ছবি, যেখানে তাকে আপত্তিকর ও বেফাঁস ভঙ্গিতে উপস্থাপন করা হয়। এসব ছবি ঘিরে তৈরি হয় বিভ্রান্তি, উত্তেজনা এবং ব্যাপক নেতিবাচক মন্তব্যের ঢল। তবে বিশদ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে—ভাইরাল হওয়া ছবিগুলো আদৌ সাদিয়া আয়মানের নয়, বরং অত্যাধুনিক এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে মিথ্যাভাবে তার চেহারা বসিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এসব ছবি।
বিভ্রান্তির সূচনা
গেলো কয়েকদিন ধরে অন্তত আটটি বিকৃত ছবি নানান সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে সাদিয়া আয়মানের মুখাবয়ব প্রতিস্থাপন করে অন্য নারীর দেহে সংযোজন করা হয়েছে। ছবিগুলোতে তাকে দুইটি ভিন্ন পোশাকে দেখা যায়, যেগুলো সাধারণ ব্যবহারকারীদের মনে সন্দেহ না জাগালেও, কিছু বিশ্লেষক ও অনুসন্ধানমূলক সংস্থা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ শুরু করে।
বিশেষভাবে, রিউমর স্ক্যানার নামে একটি নির্ভরযোগ্য অনলাইন ফ্যাক্টচেকিং প্ল্যাটফর্ম তাদের অনুসন্ধানে এসব ছবি সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে।
ভারতীয় নারীর ছবি থেকে তৈরি হয় বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট
রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোর একটি সেট সংগ্রহ করা হয়েছে একটি ভারতীয় ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী ‘স্নিগ্ধা সারথী’-এর অ্যাকাউন্ট থেকে। স্নিগ্ধার এই ছবি প্রকাশিত হয় চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি। সেই পোস্টে তার পোশাক, ভঙ্গিমা ও পটভূমি ভাইরাল ছবির সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়। কেবল তার মুখমণ্ডলের স্থলে এআই প্রযুক্তির সাহায্যে বসানো হয়েছে সাদিয়া আয়মানের মুখ।
এই ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটিকে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, সেটির অবস্থান ভারত এবং সেটির অন্যান্য পোস্টেও সাদৃশ্যপূর্ণ পোশাক ও পরিবেশ লক্ষ্য করা গেছে। এ থেকে সহজেই ধারণা করা যায়— ছবিগুলো কৃত্রিমভাবে সম্পাদিত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য তৈরি।
বাংলাদেশের ইনফ্লুয়েন্সারকেও ব্যবহার
আরও কিছু ছবির উৎস চিহ্নিত করেছে রিউমর স্ক্যানার। ‘দিল মারিয়ান নেহা’ নামে এক ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীর ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত কিছু ছবি নিয়েও একই কৌশলে কাজ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, ভাইরাল ছবিগুলোর পোশাক, ভঙ্গিমা এবং দৃশ্যপট ওই নারীর ছবির সঙ্গে পুরোপুরি মিলে গেলেও কেবল মুখমণ্ডল সাদিয়া আয়মানের। ওই অ্যাকাউন্টটি বাংলাদেশের এবং একই নামের টিকটক অ্যাকাউন্টেও পাওয়া গেছে সংশ্লিষ্ট পোশাকে তার একটি ভিডিও, যা সম্পূর্ণ নির্দোষ এবং অশ্লীলতার ছিটেফোঁটাও নেই।
প্রযুক্তির অপব্যবহার ও চরিত্র হনন
এই ঘটনা আবারো প্রমাণ করলো— কীভাবে এআই প্রযুক্তিকে অপব্যবহার করে সহজেই কাউকে সামাজিকভাবে হেয় করা যায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক 'ডিপফেইক' প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এমন ছবি তৈরি করা সম্ভব, যা দেখলে বোঝার উপায় থাকে না যে এটি বাস্তব না এডিটেড। সাদিয়া আয়মানের মতো একজন পাবলিক ফিগারকে টার্গেট করে এমন প্রযুক্তিগত নির্যাতন আসলে ব্যক্তি নয়, বরং সমাজ ও নৈতিকতার বিরুদ্ধে এক বড় আঘাত।
সাদিয়া আয়মান বা তার প্রতিনিধির পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না আসলেও, এ ধরনের ছবি নিয়ে জনমনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে এবং অনেকে এর বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধ তদন্ত ব্যুরোতে অভিযোগ জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ