সুন্নতে খতনার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানুষের জীবনের এমন কোনো বিষয় নেই- যে বিষয়ে ইসলামের সমাধান নেই।  সুন্নতে খতনা আমাদের সমাজে মুসলমানি বলে পরিচিত। হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের মুসলিম সমাজে এ রীতি চলে আসছে। সুন্নতে খতনা একটি মহান সুন্নত। যুগে যুগে নবী-রাসুলগণও এ সুন্নত পালন করেছেন।

পৃথিবীতে সর্বপ্রথম সুন্নতে খতনা কে করেছেন?
পৃথিবীতে সর্বপ্রথম এ সুন্নত পালন করেছেন মহান আল্লাহর বন্ধু হজরত ইবরাহিম (আ.)। প্রখ্যাত হাদিসবেত্তা হজরত সাইদ ইবনে মুসাইয়াব (রহ.) থেকে বর্ণিত, হজরত ইবরাহিম (আ.) হলেন খতনার সুন্নত পালনকারী সর্বপ্রথম ব্যক্তি। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ২৬৪৬৭)

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো, যখন ইবরাহিম (আ.)-কে তাঁর রব কয়েকটি বাণী দিয়ে পরীক্ষা করেন, অতঃপর তিনি তা পূর্ণ করেন। তিনি বলেন, আমি তোমাকে মানুষের জন্য নেতা বানাব। সে বলল, আমার বংশধরদের থেকেও? তিনি বলেন, অত্যাচারিরা আমার ওয়াদাপ্রাপ্ত হয় না। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১২৪)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) ইমাম আবদুর রাজ্জাক (রহ.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, ইবরাহিম (আ.)-এর পরীক্ষাগুলোর মধ্য থেকে একটি শারীরিক পরীক্ষা হলো খতনা করা। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ১/৪০৬)

নবীদের সুন্নত খতনা করা
মহান আল্লাহর বন্ধু হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর পর সব নবী-রাসুল খতনা করেছিলেন। অনেক হাদিস শরিফে এ সুন্নত পালনের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, মানুষের জন্মগত স্বভাব পাঁচটি—খতনা করা, নাভির নিম্নদেশে ক্ষুর ব্যবহার করা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নখ কাটা ও গোঁফ খাটো করা। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৮৮৯)

আরও পড়ুন : ‘এলিট শ্রেণীদের কাছে বাংলার চেয়ে ইংরেজি ভাষার কদর বেশি’

সুন্নতে খতনার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
সুন্নতে খতনার দ্বারা শরীর অধিক পাকপবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকে। খতনা করালে শিশুদের মূত্রপথের সংক্রমণ প্রতিরোধ হয়। এর ফলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, জ্বর, খাবারে অনীহা এবং স্বাস্থ্য ভালো না হওয়া ইত্যাদি রোগ থেকে ঝুঁকিমুক্ত থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে খতনা করালে লিঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধ হয় ও যৌনবাহিত রোগের ঝুঁকি কমে।

খতনা অনেক রোগ নিরাময় করে। পুরুষাঙ্গের মাথার বাড়তি চামড়ার নিচে এক ধরনের সাদা পদার্থ জমে এবং এটিই পুরুষাঙ্গের ক্যান্সারের জন্য দায়ী। লিঙ্গের মাথায় প্রদাহ, চুলকানি ও জ্বালাপোড়া করলেও খতনা করালে তা সেরে যায়। 

সুন্নতে খতনার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা
আধুনিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা সুন্নতে খতনাকে অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত বলে মনে করেন। খতনার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকজাতীয়  (ব্যাকটেরিয়া) রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। খতনার প্রধান সুবিধা হলো, এর ফলে লিঙ্গের অগ্র ত্বকে যে তরল জমে নোংরা অবস্থার সৃষ্টি করে, তা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। দেড় হাজার বছর আগে মহানবী (সা.) খতনার কথা বলেছেন, ব্যাপক গবেষণা শেষে আজকের আধুনিক বিজ্ঞান স্বীকার করেছে, খতনার অভাবনীয় উপকারিতা আছে।

সুন্নতে খতনার অভাবনীয় উপকারিতা নিয়ে অস্ট্রেলীয় মেডিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. ব্রায়ান মরিস চমৎকার গবেষণা করেছেন। তাতে উল্লেখ করা হয়, যেসব বালকের খতনা করা হয়নি, তাদের অপেক্ষাকৃত কিডনি, মূত্রথলি ও মূত্রনালির ইনফেকশন চার থেকে ১০ গুণ বেশি হয়। তিনি মনে করেন, সারকামসিশনের (খতনা) মাধ্যমে অন্তত এক-চতুর্থাংশ মূত্রনালির ইনফেকশন হ্রাস করা যায়।

ওয়াশিংটনের সৈনিক মেডিক্যাল কলেজের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. বিজবেল বলেন, ‘আমি প্রথমে খতনার বিরোধী ছিলাম, পরে দীর্ঘ গবেষণার ফলে প্রমাণিত হলো যে মূত্রথলি ও মূত্রনালিবিষয়ক অনেক জটিল রোগের সমাধান হলো খতনা। ’

এমনকি খতনা মরণব্যাধি যৌনরোগ প্রতিরোধে সহায়ক। সাধারণ অর্থে লিঙ্গের ক্যান্সার হলো অপরিচ্ছন্নতার ব্যাধি। পুরুষাঙ্গের শীর্ষে ঘা হয়ে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে একসময় ক্যান্সারে রূপ নেয়, এমন রোগীর ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে, খতনা করানো পুরুষের চেয়ে সুন্নতে খতনা না করানো পুরুষ এ ধরনের ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।

যৌনবিজ্ঞানীরা বহুকাল আগে থেকেই বলে আসছেন যে পুরুষের খতনা করালে স্পর্শকাতরতা বেড়ে যায়। এতে যৌন মিলনে অধিক আনন্দ উপভোগ করে নারী-পুরুষ উভয়ই। বর্তমানে ইংল্যান্ড, আমেরিকাসহ ইউরোপেও প্রচুর পরিমাণে খতনা করানো হয়। সেখানে গুরুত্বের সঙ্গে এটা দেখা হয়।

ইদানীং ডাক্তারের অসর্তকতায় বেশ কয়েকটি খারাপ সংবাদ পাওয়া গেছে। মানুষের সেবা অনন্য পেশা। ডাক্তারদের আরও সর্তকতার সাথে কাজ করতে হবে।