
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন, গণতন্ত্রের ভিত্তি সুদৃঢ়করণ ও একটি ফ্যাসিবাদমুক্ত রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর জোর দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। রোববার (৮ জুন) রাতে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায় স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
সভায় হাসনাত আব্দুল্লাহ দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশের মানুষ একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রত্যাশা করছে। রাজনৈতিক মতাদর্শ যাই হোক, আজ সময় এসেছে সকল গণতান্ত্রিক, বিশেষ করে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে একত্র হয়ে কাজ করার। আমাদের লক্ষ্য হতে হবে একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা যেখানে জনগণের ইচ্ছাই হবে মুখ্য।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ আজ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। একদিকে রাষ্ট্রীয় স্বায়ত্তশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ হুমকির মুখে, অন্যদিকে জনগণের ভোটাধিকার ক্ষীয়মান। এ অবস্থায় জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে, সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি গুরুদায়িত্ব বর্তায়।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যে বাংলাদেশ কল্পনা করি, সেটি যেন দেশের আপামর জনসাধারণের কণ্ঠস্বরের প্রতিফলন হয়। একক কোনো দলের নয়, বরং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণেই একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সমাজ গঠন সম্ভব।”
বিশেষ করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে আগামী সাধারণ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এনসিপির এই মুখ্য সংগঠক বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এপ্রিলের প্রথমার্ধ্বে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা এটিকে ইতিবাচকভাবে দেখছি। তবে এর আগে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং একটি স্পষ্ট ঘোষণাপত্র জাতির সামনে উপস্থাপন করতে হবে, যাতে সব রাজনৈতিক দল আশ্বস্ত হতে পারে যে নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক হবে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “নির্বাচনের আগে অবশ্যই একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। বিরোধী দলগুলো যেন হয়রানির শিকার না হয়, মিডিয়া যেন নিরপেক্ষ থাকে এবং প্রশাসন যেন কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ না করে— এই বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখতে হবে। গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচন নয়, বরং একটি কার্যকর নির্বাচনী ব্যবস্থা দরকার, যেখানে প্রতিটি ভোটের মূল্য থাকবে।”
এনসিপির সাংগঠনিক পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “জাতীয় নাগরিক পার্টি এখন সাংগঠনিক বিস্তারে মনোযোগ দিয়েছে। আমরা ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা পর্যন্ত কাঠামো তৈরি করছি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তোলা, যাতে সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের বার্তা পৌঁছানো সম্ভব হয়। রাজনীতিকে কেন্দ্র করে যেন আর বিভাজন না থাকে, বরং সাধারণ মানুষের কল্যাণেই যেন রাজনীতি হয়।”
তিনি আরও জানান, “সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আমরা আশাবাদী, এই মাসের মধ্যেই সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারব। তখন আমাদের দল একটি স্বীকৃত রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে মাঠে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারবে।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এনসিপি নেতা বলেন, “দেশের রাজনীতিতে ফ্যাসিবাদী শক্তির উত্থানকে থামাতে হলে গণতন্ত্রের পথে থেকেই লড়াই করতে হবে। কোনো ধরনের সহিংসতা বা চরমপন্থা নয়, বরং আদর্শিক লড়াইয়ের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করাই হবে আমাদের মূল কৌশল। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের শক্তির কাছে কোনো কর্তৃত্ববাদ টিকতে পারে না।”
হাসনাত আব্দুল্লাহর এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে একটি সুস্পষ্ট বার্তা পাওয়া যায়— এনসিপি এখন আর শুধু রাজনৈতিক বিবৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না, বরং সংগঠিত জনভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চায়, যারা গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানুষের অধিকার নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করবে।
দেবিদ্বারের মতবিনিময় সভা শেষে উপস্থিত স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাঁকে উষ্ণ সমর্থন জানিয়ে বলেন, “আমরা অনেকদিন পর এমন একজন রাজনৈতিক নেতার বক্তব্য শুনলাম যিনি সংঘাত নয়, সংলাপ এবং ঐক্যের কথা বলেন। আমাদের প্রত্যাশা, এনসিপি সত্যিই দেশের রাজনীতিতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রতীক হয়ে উঠবে।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ