ছবি: সংগৃহীত
বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার কাজে বাংলাদেশ নানা ধরনের বাধার মুখে পড়ছে। বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) ও সরকারের যৌথ তদন্ত দল এক সমন্বিত প্রতিবেদনে বিদেশে পাচার করা অর্থ শনাক্ত ও ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে অন্তত ১১টি বড় চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে। প্রতিবেদন অনুসারে, এই চ্যালেঞ্জগুলো শুধু আইনগত নয়, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ও প্রযুক্তিগত ঘাটতির সাথেও জড়িত।
১১টি মূল চ্যালেঞ্জের সারাংশ:
সমন্বয়হীনতা: অর্থপাচার শনাক্ত ও ফেরানোর কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। তথ্য আদান-প্রদান অনিয়মিত ও অসম্পূর্ণ।
তথ্যভান্ডারের অভাব: বিদেশে সম্পদ শনাক্ত ও ফেরত আনার তথ্য এক জায়গায় সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। আলাদা সংস্থাগুলো নিজ নিজ ডাটাবেসে তথ্য রাখে।
জনবল ও দক্ষতার সংকট: ফরেনসিক অ্যাকাউন্টিং, ডিজিটাল প্রমাণ বিশ্লেষণ এবং আন্তর্জাতিক চিঠিপত্র তৈরির জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত জনবল নেই।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে দুর্বলতা: অনেক ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক মানের অনুসারে প্রস্তুতকৃত মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।
আইনি জটিলতা ও প্রতিরোধ: অর্থ পাচারের গন্তব্য দেশগুলোর আইন আমানতকারীদের অধিক সুরক্ষা দেয়। ফলে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া কঠিন হয়।
ভাষাগত সমস্যা: অনেক দেশ তাদের নিজস্ব ভাষায় এমএলএআর চায়, কিন্তু বাংলাদেশে স্বীকৃত অনুবাদক ও ভাষাজ্ঞানসম্পন্ন জনবল নেই।
চুক্তির অভাব: এখন পর্যন্ত শুধু ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স চুক্তি (এমএলএটি) রয়েছে, অন্য গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সঙ্গে নেই।
তথ্য সংগ্রহে বাধা: পাচারকারীর পরিচয় ও লেনদেন তথ্য সংগ্রহে সংশ্লিষ্ট দেশের সহযোগিতা পাওয়া কঠিন, বিশেষ করে যেসব দেশে বাংলাদেশিদের বড় অঙ্কের টাকা রয়েছে।
প্রযুক্তিগত দুর্বলতা: দেশে এখনো আন্তর্জাতিক মানের ফরেনসিক অডিট, ডিজিটাল ডেটা বিশ্লেষণ ও এআই-নির্ভর লেনদেন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা কার্যকরভাবে চালু হয়নি।
আইএসিসিসির সঙ্গে সংযোগের অভাব: আন্তর্জাতিক সংস্থা ISICC-এর সহযোগিতা পেতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সঙ্গে চুক্তির প্রয়োজন, যা আইনগত জটিলতায় আটকে আছে।
নতুন গন্তব্য দেশ: অর্থ পাচারের জন্য রাশিয়া, সাইপ্রাস, কেম্যান আইল্যান্ডস, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস, আইল অব ম্যানসহ আরও কয়েকটি নতুন দেশ শনাক্ত হয়েছে, যাদের সঙ্গে এখনো কোনো আইনি সহযোগিতা চুক্তি নেই।
গৃহীত বা প্রস্তাবিত পদক্ষেপসমূহ:
আইনি সংস্কার: পাচারবিরোধী চুক্তি ও আইএসিসিসির সঙ্গে সমঝোতা করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইন সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে।
তথ্যভান্ডার: বিএফআইইউ-তে একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে সব সংস্থার তথ্য থাকবে।
প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি: আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি (ফরেনসিক টুলস, এআই, ই-এমএলএআর) ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কূটনৈতিক উদ্যোগ: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দিয়ে চুক্তিভিত্তিক আলোচনা এবং দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ জোরদার করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বহুপাক্ষিক সহযোগিতা: এগমন্ট গ্রুপের সদস্য ১৭০টি দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (MOU) সম্পাদনের কাজ চলমান, এখন পর্যন্ত ৮১টির সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।
এই প্রতিবেদনটি বিভিন্ন সংস্থায় পাঠানো হয়েছে এবং দ্রুত সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকার বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার প্রচেষ্টাকে আরো সুসংগঠিত ও কার্যকর করার পরিকল্পনা করছে। তবে আন্তর্জাতিক জটিলতা ও অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সময় ও উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



