ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা সামনে রেখে সারা দেশের আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাদের বলা হয়েছে, আসন্ন নির্বাচন ‘সহিহ ও শুদ্ধ’ হবে। কোনো কর্মকর্তা রাজনৈতিক দল বা সম্ভাব্য প্রার্থীকে ‘বিশেষ সুবিধা’ দিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি রাজনৈতিক দলের কার্যালয় বা প্রার্থীদের বাসা ও অফিসেও যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক কোনো ধরনের যোগাযোগ না রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো আনুষ্ঠানিক কাজের প্রয়োজন হয়, তা নির্বাচন কার্যালয়ে সম্পন্ন করতে হবে। সোমবার ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার কমিশনার এসব নির্দেশনা দেন। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে তফসিল ঘোষণার বক্তব্য রেকর্ড করতে বিটিভি ও বেতারকে কাল ডেকেছে ইসি। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সোমবার এক ব্রিফিংয়ে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তবে কাল নাকি বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা হবে, তা জানাননি তিনি।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তাদের আইন ও নিয়ম মেনে চলতে বলা হয়েছে। তারা নিয়ম মেনে চললে আমরা সব ধরনের সুরক্ষা দেব। কোনো দল বা ব্যক্তিকে আনুকূল্য দেখালেই কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজন করায় ভোটকক্ষের পরিবর্তন আনতে মাঠপর্যায়ে চিঠি পাঠিয়েছে ইসি। এতে প্রতিটি ভোটকক্ষে দুটি গোপন বুথ (ব্যালট পেপারে সিল মারার গোপন স্থান) নির্মাণ করতে বলা হয়েছে। যদি কোনো ভোটকেন্দ্রে দুটি গোপন বুথ করার মতো অবকাঠামো সুবিধা না থাকে, সেখানে ভোটকক্ষ বাড়াতে বলা হয়েছে। এছাড়া কোনো ভোটকেন্দ্রে বিদ্যুৎ সুবিধা না থাকলে ওইসব কেন্দ্রের তালিকা তৈরি করে নির্বাচন কমিশনে পাঠাতে বলা হয়েছে।
বৈঠকে মাঠ কর্মকর্তাদের কাউকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। ফলে মাঠপর্যায়ের কোনো সমস্যাও ইসিকে জানাতে পারেননি তারা। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।
বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন নির্বাচন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, আমরা সহিহ ও শুদ্ধ নির্বাচন করব। কোনো কর্মকর্তা পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করলে তাকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, সারা দেশে সব ডিসি, এসপি, ইউএনও এবং ওসি নতুন পদায়ন করা হয়েছে। তাদের নির্বাচনি অভিজ্ঞতা তুলনামূলক কম। নির্বাচনি কাজে তাদের সব ধরনের সহায়তা দিতে হবে।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, আপনারা (ইসির কর্মকর্তারা) নির্বাচন কমিশনের মাঠপর্যায়ের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আপনাদের আচরণ ও চলাচলের ওপর ইসির ভাবমূর্তি নির্ভর করছে। তিনি বলেন, ইসির ওপর মানুষের আস্থার ঘাটতি রয়েছে। আপনাদের কাজের মাধ্যমে আস্থার সংকট দূর করতে হবে। তিনি আরও বলেন, অন্যায় করে কেউ ছাড় পাবেন না।
আরেক নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ডিসি, এসপি, ইউএনও ও ওসিদের নির্বাচনি প্রক্রিয়া ও কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করবেন। তাদের যেগুলো শেখানো দরকার, তা শেখাবেন। মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ইসির কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয় করবেন। তিনি বলেন, আপনারা ইসির ফোকাল পয়েন্ট। আপনাদের প্রতিবেদনের ওপর ইসি নির্বাচনি বিভিন্ন পদক্ষেপ নেবে। প্রতিবেদন দেওয়ার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা শতভাগ বজায় রাখবেন।
আরেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আমরা ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছি, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগে বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তাদের রাখবেন না। ওই বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে খেয়াল রাখবেন। কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে যাতায়াত করবেন না। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে অফিসের বাইরে দলীয় কার্যালয়, রেস্টুরেন্ট, বাসাবাড়ি বা অন্য কোথাও মিটিং করবেন না। কারও যদি নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে অফিশিয়াল কাজ থাকে, তা নির্বাচন কার্যালয়ে সম্পন্ন করতে হবে। আনঅফিশিয়াল সম্পর্ক রাখা যাবে না। কেউ এসব কাজ করলে তিনি বিপদে পড়বেন।
কাল সিইসির ভাষণ রেকর্ডে বিটিভি ও বেতারকে ডেকেছে ইসি : ব্রিফিংয়ে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, সিইসি ১০ ডিসেম্বর বিটিভি ও বেতারের জন্য তফসিলসংক্রান্ত একটি ভাষণ রেকর্ড করবেন। ভাষণের বিষয়বস্তু এবং রেকর্ডিংয়ের সুনির্দিষ্ট সময় সিইসি নির্ধারণ করবেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, রেকর্ডিংয়ের তারিখ নিশ্চিত হলেও ভাষণের বিষয়বস্তু বা সময় সম্পর্কে এখনো সচিবালয় অবহিত নয়। সিইসি বিষয়টি চূড়ান্ত করলেই তা গণমাধ্যমকে জানানো হবে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কমিশনের সাক্ষাতের সময়সূচিও এখনো নির্ধারণ হয়নি, তবে আজ তা জানানো হতে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তফসিল ঘোষণার পর দেশে যারা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার যোগ্য, তাদের নিবন্ধন শুরু হবে বলে জানান ইসি সচিব। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর ১৫ দিনের মধ্যে সরকারি চাকরিজীবী এবং আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের পোস্টাল ব্যালটের জন্য নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



