ছবি: সংগৃহীত
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আবারও বড় ধরনের স্বর্ণ চোরাচালান চেষ্টা ভেস্তে দিয়েছে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। চলমান নজরদারি ও গোয়েন্দা তৎপরতার অংশ হিসেবে বিমানবন্দরের বহুতল কার পার্কিং এলাকায় অভিযানে ১,৩০০ গ্রাম স্বর্ণ এবং নগদ ১৩,৯৭০ সৌদি রিয়ালসহ নূরুল আলম (৩০) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে এপিবিএন সদস্যরা। আটক নূরুল আলম দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত থেকে ‘রিসিভার’ হিসেবে কাজ করছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
২২ নভেম্বর ২০২৫, দুপুর ২টা ২০ মিনিট। সাধারণ দিনের মতোই ব্যস্ততা চলছে বিমানবন্দরের বহুতল কার পার্কিং এলাকায়। ঠিক সেই সময় নিয়মিত টহলে থাকা এপিবিএন সদস্যরা হঠাৎ দেখতে পান—এক ব্যক্তি পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দ্রুত সরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আচরণ সন্দেহজনক মনে হওয়ায় সদস্যরা তাকে অনুসরণ করেন এবং কিছুক্ষণ পর সু-কৌশলে পালানোর চেষ্টা করলে আটক করেন।
পরে তাকে এপিবিএন অফিসে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করা হলে বেরিয়ে আসে চোরাচালানের পুরো চিত্র। তার গলায় ঝুলানো হজ্জ্বে ব্যবহৃত কাপড়ের ব্যাগ, পরিহিত জুব্বা এবং পায়জামার পকেট থেকে মোট ১,৩০০ গ্রাম বিভিন্ন ক্যারেটের স্বর্ণালংকার (২১, ২২ ও ২৪ ক্যারেট) উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে পাওয়া যায় ১৩,৯৭০ সৌদি রিয়াল।
সব স্বর্ণালংকার ও টাকা জব্দতালিকা মূলে আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জব্দ করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নূরুল আলম স্বীকার করেন—তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিমানবন্দরের আশপাশে সক্রিয় স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের হয়ে রিসিভার হিসেবে কাজ করতেন। বিভিন্ন দেশ থেকে এসে পৌঁছানো অজ্ঞাতনামা যাত্রীরা তাকে কৌশলে স্বর্ণ হস্তান্তর করতেন। নূরুল আলম সেগুলো গ্রহণ করে চক্রের অন্য সদস্যদের কাছে পৌঁছে দিতেন।
চক্রটি মূলত শুল্ক কর ও সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে স্বর্ণ দেশে আনার উদ্দেশ্যে বহুদিন ধরে বিভিন্ন রুট ও কৌশল ব্যবহার করে আসছে। আটক ব্যক্তি জানান, চক্রটি প্রবাসী যাত্রীদের সাহায্যে স্বর্ণ আনে এবং বিমানবন্দরের নিরাপত্তা এড়িয়ে তা শহরের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেয়।
এ বছর স্বর্ণ উদ্ধার ২৮ কেজি ছাড়িয়েছে
চলতি বছর শুধুমাত্র এপিবিএন একাই বিমানবন্দর এলাকা থেকে এখন পর্যন্ত মোট ২৮ কেজি ৫০৮.৩৮ গ্রাম (২৮,৫০৮.৩৮ গ্রাম) স্বর্ণ উদ্ধার করেছে। নিয়মিত অভিযান ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির ফলে স্বর্ণ ও মাদকচোরাচালান চক্রগুলো এখন কঠিন চাপে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে এয়ারপোর্ট (১৩) এপিবিএনের অপারেশনাল কমান্ডার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন— “বিমানবন্দর এলাকায় চোরাচালান রোধে আমরা নিয়মিতভাবে অভিযান পরিচালনা করে আসছি। স্বর্ণ ও মাদক চোরাচালানের তৎপরতা বন্ধে এপিবিএন সবসময়ই সতর্ক ও তৎপর। যেকোনোভাবে বিমানবন্দরকে ব্যবহার করে অপরাধ করার সুযোগ নেই—এ বিষয়টি আমরা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করছি। ভবিষ্যতেও আমাদের অভিযান আরও জোরদার থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, বিমানবন্দর হলো দেশের প্রথম প্রবেশদ্বার। এখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ। চোরাচালানকারীরা যাতে নিত্যনতুন কৌশল ব্যবহার করে স্বর্ণ কিংবা মাদক আনতে না পারে সেজন্য প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।
আটক নূরুল আলমের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। তিনি অজ্ঞাত যাত্রীদের সহযোগিতায় পরস্পর যোগসাজশে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে স্বর্ণ আনয়ন করায় বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪–এর ২৫/বি (১)(বি) ধারায় অপরাধ করেছেন বলে পুলিশ জানায়।
এআইনের অধীনে শাস্তি গুরুতর—প্রমাণিত হলে দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড থেকে শুরু করে অর্থদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।
চলমান অভিযানের ফলে স্বর্ণ চোরাচালান চক্রগুলো দমে গেলেও এখনো তারা সক্রিয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যেও বিভিন্ন কৌশলে স্বর্ণ আনতে চেষ্টা করে চক্রগুলো। তবে এপিবিএন স্পষ্ট করেছে—বিমানবন্দরকে চোরাচালানমুক্ত রাখতে ভবিষ্যতেও তাদের অভিযান আরও শক্তিশালী ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর হবে।
বাংলাবার্তা/এসজে
.png)
.png)
.png)



