ছবি: সংগৃহীত
শীতকাল এমন একটি ঋতু, যখন ঠান্ডা, কুয়াশা ও শুষ্কতার কারণে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে কিছুটা পরিবর্তন আসে। এই সময়টিতে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়, ত্বক হয়ে পড়ে রুক্ষ, আর পাচনতন্ত্রও হয়ে ওঠে অলস। তাই শীতের সকালে এমন কিছু খাবার খাওয়া প্রয়োজন যা শরীরের ভেতর থেকে উষ্ণতা, পুষ্টি এবং শক্তি যোগায়। আর ঠিক এই জায়গাতেই চিয়া সিড হতে পারে এক অসাধারণ সমাধান।
চিয়া সিড—একটি ক্ষুদ্র বীজ, কিন্তু এতে লুকিয়ে আছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান। এটি মূলত সালভিয়া হিস্পানিকা (Salvia Hispanica) নামের এক প্রজাতির উদ্ভিদের বীজ, যার উৎপত্তি মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায়। আজ এটি স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, উচ্চমাত্রার ফাইবার, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিনে সমৃদ্ধ এই বীজের উপকারিতা এতটাই বহুমুখী যে একে ‘সুপারফুড’ বলা হয়।
শীতের সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পানিতে ভিজানো চিয়া সিড খেলে শরীরে যে পরিবর্তনগুলো ঘটে, তা শুধু শীতের কষ্ট দূরই করে না, বরং শরীরকে সারাদিন চনমনে রাখে। নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো—
শীতকালীন ঠান্ডা-কাশি, গলা ব্যথা কিংবা ফ্লুর মতো সাধারণ অসুস্থতা এই সময় খুব সাধারণ বিষয়। চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন-সি, ওমেগা-৩ এবং জিঙ্ক—যা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। এটি শরীরে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেল ধ্বংস করে কোষকে রক্ষা করে এবং ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন সকালে ১-২ চামচ চিয়া সিড ভিজিয়ে খেলে সর্দি-কাশির প্রবণতা কমে, আর শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় থাকে।
শীতে ত্বক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুষ্ক বাতাস ও ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে ত্বক ফেটে যায়, টান ধরে, এমনকি চুলকানি পর্যন্ত হয়। চিয়া সিডে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন-ই ত্বকের কোষে আর্দ্রতা ধরে রাখে, ফলে ত্বক থাকে নরম, উজ্জ্বল ও সজীব।
এছাড়া এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের বার্ধক্য বিলম্বিত করে এবং সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকেও সুরক্ষা দেয়। যারা নিয়মিত চিয়া সিড খায়, তাদের ত্বক সাধারণত আরও উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত থাকে বলে দেখা গেছে।
শীতে অনেকেই হজমজনিত সমস্যায় ভোগেন। ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়ার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। চিয়া সিডে রয়েছে উচ্চমাত্রার দ্রবণীয় ফাইবার, যা পাচনতন্ত্রে পানির সঙ্গে মিশে জেল জাতীয় পদার্থ তৈরি করে। এটি অন্ত্রের গতি স্বাভাবিক রাখে এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
প্রতিদিন সকালে ১ চা চামচ চিয়া সিড পানিতে ভিজিয়ে খেলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং পেট থাকে হালকা ও আরামদায়ক।
শীতে পানির চাহিদা কম মনে হলেও শরীরে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি থেকে যায়। চিয়া সিড পানিতে ভিজলে নিজের ওজনের প্রায় ১০ গুণ পানি শোষণ করে নেয়। ফলে এটি শরীরে দীর্ঘসময় আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং ডিহাইড্রেশনের সমস্যা কমায়।
বিশেষ করে যারা সকালে নিয়মিত ব্যায়াম বা জগিং করেন, তাদের জন্য এটি প্রাকৃতিক হাইড্রেশন ড্রিঙ্ক হিসেবে কাজ করে।
শীতে অনেকেই বেশি খেতে শুরু করেন এবং ক্যালোরি গ্রহণ বেড়ে যায়। চিয়া সিড ফাইবারে সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি পাকস্থলীতে পানি শোষণ করে ফুলে ওঠে, ফলে পেট ভরার অনুভূতি দেয়। এতে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং অপ্রয়োজনীয় ক্যালোরি গ্রহণ কমে।
এছাড়া এতে থাকা প্রোটিন পেশি গঠনে সাহায্য করে, যা শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায় এবং চর্বি পোড়াতে সহায়তা করে। নিয়মিত চিয়া সিড খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণ অনেক সহজ হয়।
চিয়া সিডে থাকা প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট শরীরকে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগায়। শীতের সকালে যখন শরীর ভারী লাগে, তখন এটি খেলে দ্রুত শক্তি ফিরে আসে। খেলোয়াড়রা প্রাকৃতিক এনার্জি বুস্টার হিসেবে চিয়া সিড ব্যবহার করেন।
এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, ফলে ক্লান্তি বা মাথা ঘোরা হয় না এবং সারাদিন কর্মক্ষম থাকা যায়।
১. পানিতে ভিজিয়ে: এক গ্লাস পানিতে ১ চা চামচ চিয়া সিড ভিজিয়ে ৩০ মিনিট পর পান করুন।
২. স্মুদি বা জুসে: ফলের স্মুদি বা জুসে মিশিয়ে খেতে পারেন।
৩. ওটমিল বা দইয়ে: সকালের নাশতায় ওটস বা দইয়ের সঙ্গে চিয়া সিড মিশিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যকর ও পরিপূর্ণ খাবার।
৪. সুপ বা সালাদে: দুপুর বা রাতের খাবারে সালাদে ছিটিয়ে দিলে খাবারের পুষ্টিগুণ বাড়ে।
যেকোনো ভালো জিনিসের মতোই চিয়া সিডেরও পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ জরুরি। অতিরিক্ত খেলে পেট ফেঁপে যাওয়া, গ্যাস বা হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই প্রতিদিন ২০-২৫ গ্রাম (প্রায় ২ চা চামচ) এর বেশি না খাওয়াই ভালো।
এছাড়া যারা রক্ত তরল রাখার ওষুধ খান বা এলার্জিতে ভোগেন, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এটি খাদ্যতালিকায় যুক্ত করা উচিত।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



