ছবি সংগৃহীত
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় দুই মাস ধরে হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার অবস্থা সংকটাপন্ন। প্রায়ই তাকে সিসিইউতে নেওয়া হচ্ছে। তারা মনে করছেন, দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা দিলে তিনি সেরে উঠতে পারেন।
এ জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে শেষ চেষ্টা হিসাবে ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। আগেও কয়েকবার এমন আবেদন করা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে ‘প্রতিবন্ধকতা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও রবিবার এ ধারা নিয়েই কথা বলেছেন।
৪০১ ধারার ক্ষমতাবলেই নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে ২০২০ সালের মার্চে খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে বাড়িতে থাকার অনুমতি দেয় সরকার। নতুন আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী জানান, একই আবেদন বারবার নিষ্পত্তির সুযোগ নেই। এটি একবারই নিষ্পত্তি হয়। ফলে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে হলে পুনরায় জেলে গিয়ে আদালতে আবেদন করতে হবে। তবে বিএনপির আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলে দেওয়া আছে, সরকার চাইলে তাকে মুক্তি দিতে পারে। বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দিতে পারে।
১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকার চাইলে বিনাশর্তে বা শর্তসাপেক্ষে কারও দণ্ড স্থগিত করতে পারে। সরকার স্থগিতাদেশের সময় বাড়াতে পারে। আবার শর্ত ভাঙলে যেকোনো সময় স্থগিতাদেশ বাতিল করে দিতে পারে।
দণ্ড স্থগিত বা মওকুফ করার ক্ষমতা
উপধারা (১) অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হলে সরকার যেকোনো সময় বিনাশর্তে বা দণ্ডিত ব্যক্তি যা মেনে নেয়, সেই শর্তে তার দণ্ড কার্যকরীকরণ স্থগিত রাখতে বা সম্পূর্ণ দণ্ড বা দণ্ডের অংশবিশেষ মওকুফ করতে পারবেন।
উপধারা (২)-এ বলা হয়েছে, যখন কোনো দণ্ড স্থগিত রাখা বা মওকুফ করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়, তখন যে আদালত উক্ত দণ্ড দিয়েছিলেন বা অনুমোদন করেছিলেন, সেই আদালতের প্রিসাইডিং জজকে সরকার উক্ত আবেদন মঞ্জুর করা উচিত কিংবা মঞ্জুর করতে অস্বীকার করা উচিত, সে সম্পর্কে তার মতামত ও মতামতের কারণ বিবৃত করতে এবং এই বিবৃতির সঙ্গে বিচারের নথির নকল অথবা যে নথি বর্তমানে আছে, সেই নথির নকল প্রেরণ করার নির্দেশ দেবেন।
উপধারা (৩)-এ বলা আছে- যেসব শর্তে কোনো দণ্ড স্থগিত রাখা বা মওকুফ করা হয়েছে, তার কোনোটি পালন করা হয়নি বলে মনে করলে সরকার স্থগিত বা মওকুফের আদেশ বাতিল করবেন এবং অতঃপর যে ব্যক্তির দণ্ড স্থগিত রাখা কিংবা মওকুফ করা হয়েছিল, সে মুক্ত থাকলে যেকোনো পুলিশ অফিসার তাকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করতে পারবেন এবং তার দণ্ডের অনতিবাহিত অংশ ভোগ করার জন্য তাকে জেলে প্রেরণ করা যাবে।
উপধারা (৪)-এ বলা হয়, সেই শর্তে এই ধারার অধীন দণ্ড স্থগিত বা মওকুফ করা হয়, যা যে ব্যক্তির দণ্ড স্থগিত বা মওকুফ করা হয়, সেই ব্যক্তি পূরণ করবে অথবা শর্ত এমন হবে যা পূরণে সে স্বাধীন থাকবে।
(৪)-এর ক-তে বলা হয়, এই বিধি বা অন্য কোনো আইনের কোনো ধারা অনুসারে কোনো ফৌজদারি আদালত কোনো আদেশ দান করলে তা যদি কোনো ব্যক্তির স্বাধীনতা খর্ব করে অথবা তার বা তার সম্পত্তির ওপর দায় আরোপ করে, তা হলে উপযুক্ত উপধারাসমূহের বিধান এই আদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
উপধারা (৫)-এ বলা হয়, প্রেসিডেন্টের অনুকম্পা প্রদর্শন দণ্ড স্থগিত রাখা বা কার্যকরীকরণের বিলম্ব ঘটানো বা মওকুফ করার অধিকারে এই ধারার কোনো কিছু হস্তক্ষেপ করবে বলে মনে করা যাবে না।
(৫)-এর ক-তে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট কোনো শর্তসাপেক্ষ ক্ষমা মঞ্জুর করলে উক্ত শর্ত যে প্রকৃতিরই হোক না কেন, তা এই আইন অনুসারে কোনো উপযুক্ত আদালতের দণ্ড দ্বারা আরোপিত শর্ত বলে গণ্য হবে এবং তদানুসারে বলবৎযোগ্য হবে।
উপধারা (৬)-এ বলা হয়, সরকার সাধারণ বিধিমালা বা বিশেষ আদেশ দ্বারা দণ্ড স্থগিত রাখা এবং দরখাস্ত দাখিল ও বিবেচনার শর্তাবলি সম্পর্কে নির্দেশ দিতে পারবেন।
এই ধারার প্রয়োগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, এই ধারা সরকার প্রয়োগ করে। সরকার যেটা ভালো মনে করবে, সেভাবেই এই ধারার প্রয়োগ করতে পারবে।
খালেদা জিয়ার একজন আইনজীবী বলেন, ৪০১ ধারা বারবার বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর অনুমতি দেওয়া সরকারের ওপর নির্ভরশীল।
উল্লেখ্য, দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন। করোনা মহামারী শুরু হলে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ সাজা স্থগিত করে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। পরে ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খালেদা জিয়া বাসায় ফেরেন।