ছবি: সংগৃহীত
সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া এবারও লটারির মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ২১ নভেম্বর থেকে শুরু হবে অনলাইন আবেদন, যা চলবে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর ১৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ডিজিটাল লটারি, যার মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের নাম প্রকাশ করা হবে।
ঢাকা মহানগর ভর্তি কমিটির সদস্য ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সোমবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক বি এম আবদুল হান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভর্তি কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অধ্যাপক খান মইনুদ্দিন বলেন, ‘পূর্বের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এবারও লটারির মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড এবারও পুরো প্রক্রিয়ায় কারিগরি সহায়তা দেবে। অনলাইনে আবেদন গ্রহণ, তথ্য যাচাই ও লটারির ফলাফল প্রকাশ—সব কিছুই ডিজিটাল পদ্ধতিতে করা হবে।’
সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১২ থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদের তথ্য ও অনলাইন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করবেন। এর পরদিন থেকেই ১৩ নভেম্বর থেকে টেলিটক প্রযুক্তিগত কাজ শুরু করবে। ১৩ থেকে ১৯ নভেম্বরের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে, যাতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা বিস্তারিত জানতে পারবেন।
অনলাইন আবেদন শেষে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই করে ১৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে কেন্দ্রীয় ডিজিটাল লটারি। এতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা ১৭ থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে। ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইন-ভিত্তিক হওয়ায় অভিভাবকদের কোনো ধরণের হয়রানি বা অতিরিক্ত খরচের ঝুঁকি থাকবে না বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে লটারির মাধ্যমে ভর্তি পদ্ধতি চালু হয় ২০২১ শিক্ষাবর্ষে, করোনা মহামারির সময়। এর আগে শুধুমাত্র প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে লটারি পদ্ধতি চালু ছিল, আর অন্যান্য শ্রেণিতে ভর্তি হতো প্রবেশ পরীক্ষার মাধ্যমে। তবে মহামারির প্রভাবে বিদ্যালয়ে সরাসরি পরীক্ষা বন্ধ থাকায় সেই বছর থেকেই প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি কার্যক্রমে লটারির নিয়ম চালু হয়, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এই পদ্ধতি শিক্ষায় সমতা আনে এবং শহর-গ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করে। লটারি প্রক্রিয়া পুরোপুরি ডিজিটাল হওয়ায় এতে মানবিক হস্তক্ষেপ বা পক্ষপাতের সুযোগ নেই। ফলে অভিভাবকদের মধ্যে আস্থা তৈরি হয়েছে এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়েছে।
২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর এবং শেষ হয় ৩০ নভেম্বর। সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে নবম শ্রেণির ভর্তি আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছিল ১১০ টাকা। সেবার মতো এবারও একই ফি বহাল রাখার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মাউশি সূত্রে জানা গেছে।
গত বছর দেশে মোট প্রায় ৬,৫০০ সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৯ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী অনলাইনে আবেদন করেছিল। লটারির মাধ্যমে ৪ লাখের বেশি শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়, বাকিরা পরবর্তী ধাপে অপেক্ষমাণ তালিকায় ছিল। টেলিটকের সহযোগিতায় প্রক্রিয়াটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় এবারও একই ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখছে শিক্ষা কর্তৃপক্ষ।
অধ্যাপক বি এম আবদুল হান্নান বলেন, ‘আমরা চাই ভর্তি প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের জটিলতা না থাকুক। অভিভাবকরা যেন বাড়ি থেকেই সহজে আবেদন করতে পারেন, সেটিই মূল লক্ষ্য। লটারির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবারও উন্নত সফটওয়্যার ও নিরাপদ সার্ভার ব্যবহৃত হবে।’
তিনি আরও জানান, ভর্তি-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট (www.dshe.gov.bd) এবং টেলিটকের ওয়েবসাইট (gsa.teletalk.com.bd) এ প্রকাশ করা হবে। সেখানে শিক্ষার্থীরা আবেদন ফর্ম পূরণ, ফি প্রদান ও লটারির ফলাফল দেখতে পারবেন।
অভিভাবকদের অনেকে এই ডিজিটাল লটারিভিত্তিক ভর্তি প্রক্রিয়াকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। রাজধানীর ধানমন্ডির এক অভিভাবক বলেন, ‘আগে ভর্তি নিয়ে অনেক দৌড়াদৌড়ি করতে হতো, এখন ঘরে বসেই আবেদন করা যায়। এটা সময় ও খরচ দুটোই বাঁচায়।’ তবে কেউ কেউ অভিযোগ করেন, জনপ্রিয় বিদ্যালয়গুলোতে আসন সংখ্যা সীমিত থাকায় লটারিতে সুযোগ না পাওয়া শিক্ষার্থীদের বিকল্প ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
সার্বিকভাবে বলা যায়, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া পুরোপুরি অনলাইন ও লটারিভিত্তিক হতে যাচ্ছে। আবেদন চলবে ২১ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত, লটারি ১৪ ডিসেম্বর এবং ভর্তি ১৭-২১ ডিসেম্বর। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আশাবাদী, আগের বছরের মতো এবারও প্রক্রিয়াটি হবে স্বচ্ছ, নির্ভুল ও ঝামেলামুক্ত।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



