বিএনপির নেতা। বাংলা বার্তা
আরে ব্যাটা তোর সাহস থাকলে দেশে ফিরে আয়। আমরা তোকে একটু দেখি। লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে চামচাদের দিয়ে আগুন সন্ত্রাসের নির্দেশ না দিয়ে দেশে আসার চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এমনি এক বার্তা প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আরও বলেন, "এই দলটির নেতা কোথায়? বিএনপির এসব ফাঁকা বুলিতে আওামীলীগ ভয় পায় না। আওয়ামীলীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাঁচে, আওয়ামীলীগের রক্তে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনার নেশা মিশে আছে। আওয়ামীলীগ অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না, অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে না।
বিএনপি এবং তারেক রহমানের তীব্র সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে খালেদা জিয়া জেলে। আমি দয়া করে, আমার ক্ষমতাবলে তাকে বাসায় থাকার অনুমতি দিয়েছি। তার ছেলে ২০০৭ সালে রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে এফবিআই এসে সাক্ষ্য দিয়ে যায়। বিএনপি আন্দোলন করে, এতো টাকা কোথায় থেকে আসে? বিএনপির অর্থের যোগান নিয়ে প্রশ্ন সাধারণ মানুষেরও। দেশের টাকা লুটপাত করে বিদেশে বসে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে তারেক জিয়া। জনগণের টাকা আত্মসাৎ করেছে এবং অস্ত্র, চোরাকারবারি ও মানিলন্ডারিংয়ের সাথে জড়িত বিএনপির নির্দেশক তারেক রহমান।
গেল বছর ১২ নভেম্বর ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প ও সার কারখানা উদ্বোধন শেষে আয়োজিত জনসভায় যোগ দিয়ে এসব বক্তব্য রেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অবরোধের নামে বাসে আগুন দিয়ে যারা মানুষ পোড়ায় তাদের বিরুদ্ধে শক্তভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কঠোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বাসে আগুন দিতে আসে তাদের ধরে ঐ আগুনেই ফেলে দিন। তারা বুঝুক আগুনের কত জ্বালা। তবেই যদি তাদের শিক্ষা হয়। নয়তো তাদের শিক্ষা হবে না। বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস যুগ যুগ ধরে মানুষ দেখে আসছে। অগ্নিসন্ত্রাসদের এসব জ্বালাও পোড়াও কর্মসূচীতে অতিষ্ঠ জনগণ। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কখনই কোনো দল বা সংগঠনের আদর্শ হতে পারে না। যারা এসব ঘটায় তারা কেবল সন্ত্রাস-ই হয়। সন্ত্রাসীদের হাতে সাম্রাজ্য তুলে দেওয়ার মতো বোকা তো আওয়ামীলীগ নয়। এ দেশকে এসব অনৈতিক , অন্যায়, অত্যাচার থেকে মুক্ত করা-ই আওয়ামীলীগ এর চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
বিএনপি পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালিয়ে এম্বুলেন্স পুড়িয়ে দিয়েছে। তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপির কর্মীরা পুলিশকে প্রকাশ্য-দিবালোকে পিটিয়ে মেরেছে, এই দৃশ্য সারাদেশ দেখেছে। প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলা করেছে। এমনকি তাঁদের হাত থেকে অন্তঃসত্ত্বা নারীরাও মুক্তি পায়নি। এসব কর্মকাণ্ড গাজাবাসীর উপর ইসরায়েলীদের অত্যাচারের সাথে সাদৃশ রাখে বিধায় বিএনপিকে ইসরায়েলের জারজ সন্তান বলে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী। এ সবকে কেন্দ্র করে এখন নানা প্রশের উদ্বেগ জন্ম নিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও। দলটির নেতাকর্মীদের মতে, জনমত বলছে, কথায় আছে, শূন্য কলসি বাজে বেশি। এসব গর্জন তর্জন কি আদৌ পারবে আওয়ামীলীগকে এক চুলও নাড়াতে, নাকি সব বিএনপির ফাঁকা বুলি?
দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবার মতো বুকের রক্ত ঢেলে দিতে আমি সবসময় প্রস্তুত। আমি দেশের মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চাই। সেই সাথে, অবরোধের নামে নাশকতার বিরুদ্ধে সচেতন থাকার ব্যাপারে সন্ত্রাসীদের দেশের জনগণকে রুখে দিতে হবে বলেও আহ্বান করেন তিনি।
আর এদিকে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে 'একতরফা' বলে উল্লেখ করেছে বিএনপি। অথচ আওয়ামী সভানেত্রী কড়া বক্তব্য দিয়ে বার বার বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য এবং তারেক রহমানকে দেশে ফেরার জন্য আহ্বান করেন। এমনকি তারেক জিয়াকে দেশে ফেরার জন্য ওপেন চ্যালেঞ্জও ছুঁড়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তারেক রহমান দেশে ফিরবেন-এমন ঘোষণা বহুবার বিএনপির পক্ষ থেকে আসলেও, অবশেষে বক্তব্যের পর সুনির্দিষ্ট সময় আর কখনো জানানো হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জের পর উৎসুক জনতার মনেও প্রশ্ন জেগেছিল তারেক রহমান কি প্রধানমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জ গ্রহন করবে? আদৌ কি তারেক রহমান দেশে ফিরবে? অবশেষে দেখা গেল ৭ জানুয়ারী নির্বাচনের তারিখ বরাদ্দ করা হলেও বিএনপি থেকে এ বিষয়ে তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এসব থেকে প্রশ্ন তো থেকেই যায় সবকিছু কি তবে বিএনপির ফাঁকা বুলিই ছিল?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতে, যে বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে 'একতরফা' বলে দাবি করছে সে দলের নেতা-ই যখন নেই তখন সেই দলের অস্তিত্ব কোথায়? আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য বারবার আহ্বান করার পরও যে দল সাড়া দেয়নি, উল্টো অবরোধের নামে দেশে হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছে, সে দলের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে 'একতরফা' বলে দাবি করাটা কতটুকু যৌক্তিক?
অপরদিকে, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে জন দশেক নেতাকর্মী ঢাকার এলিফেন্ট রোড এবং পরে বেইলি রোডে দোকান কর্মচারী, ফুটপাতের পথচারী এবং রিকশা-অটোরিকশার চালক ও যাত্রীদের হাতে নির্বাচন বর্জনের আহ্বানে লিফলেট বিতরণ করতে দেখা যায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ অধিকাংশ নিবন্ধিত দল যখন ৭ জানুয়ারী ভোট সামনে রেখে প্রচারে ব্যস্ত, বিএনপি ও সমমনা দলগুলো তখন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে গেল বছর ২০ ডিসেম্বর এক ব্রিফিংয়ে অসহযোগের ডাক দেন রিজভী। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিনি নির্বাচনি দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকতে বলেন। পাশাপাশি সরকারকে কর, খাজনা এবং বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির বিল পরিশোধ বন্ধ করে দেওয়ার এবং ব্যাংকে আমানত না রাখার আহ্বান জানান।
আওয়ামীলীগ মনে করে, লিফলেট বিতরণ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এসবের লক্ষ্য কেবল জনগণকে হয়রানি করা আর নাশকতা সৃষ্টি করা। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির নির্বাচন বর্জনের ডাকে এখন কেউ আর সাড়া দেয় না, এমনকি তাদের ফাঁকা বুলিতে নেতাকর্মীরাও সাড়া দেয়নি। তাদের সেই বর্জনের হাঁকডাকও নির্বাচনী প্রচারণার মধ্যে ঢাকা পড়ে গেছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির অনেক নেতা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, তারা দল থেকে বের হয়ে তৃণমূল বিএনপি গঠন করেছে। আমাদের এখানেও তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী আছে। তিনি আরও বলেন, দেশে একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামে-গঞ্জে হাটে মাঠে-ঘাটে সব জায়গায় এখন নির্বাচনের আলোচনার ঝড়।
বাংলাবার্তা/কেএল/এআর