
ছবি: সংগৃহীত
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের দাবি’কে সামনে রেখে আজ শনিবার আয়োজিত এই সমাবেশ ঘিরে ঢাকায় সৃষ্টি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ ও রাজনৈতিক উত্তেজনা। তবে বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা উপস্থিত জনতার মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করে—দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বক্তব্য চলাকালেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং দুইবার মঞ্চে পড়ে যান।
বক্তব্যের একপর্যায়ে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন শফিকুর রহমান। তাৎক্ষণিকভাবে পাশে থাকা দলের নেতাকর্মীরা তাকে ধরেন এবং কিছু সময় বিশ্রামের পর তিনি মঞ্চে বসেই বক্তব্য শেষ করেন। চিকিৎসক দল পরে জানান, অতিরিক্ত গরম ও ক্লান্তির কারণে তার রক্তচাপ কমে যায়। তবে তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানা গেছে।
জামায়াতে ইসলামীর এ সমাবেশ উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে দেখা যায়। অনেকে রাতভর অবস্থান করেন, কেউ কেউ সড়কের পাশে অবস্থান করে শনিবার সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।
আজ শনিবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সমাবেশের প্রথম পর্ব শুরু হয়। এরপর দুপুর ২টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে জাতীয় সমাবেশের মূল আয়োজন শুরু হয়। শফিকুর রহমান সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন এবং প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশ থেকে জামায়াতের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। এতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সকল রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি, নির্বাচনের পূর্বে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা, জামায়াতে ইসলামীর সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া, গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের মুক্তি, রাজনৈতিক মামলাগুলো প্রত্যাহারসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি রাখা হয়।
সমাবেশ ঘিরে শনিবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীদের সমাবেশস্থলে যাওয়ার চিত্র দেখা যায়। এতে শহরের শাহবাগ, মৎস্য ভবন, বাংলা মোটর, পলাশী, নিউমার্কেট, জিগাতলা, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সাধারণ মানুষ এ কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে ছিল। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে কাজ করে পরিস্থিতি নজরে রাখে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াতে ইসলামীর এই সমাবেশ দলটির রাজনৈতিক মাঠে ফেরার বড় প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে এমন একটি সময় যখন দলের নিবন্ধন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় সমাবেশের আয়োজন রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা বার্তা দিচ্ছে।
তবে আমিরের অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও জামায়াতের নেতারা জানান, এটি কেবলমাত্র শারীরিক দুর্বলতা, কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়। তাঁরা আমিরের সুস্থতার জন্য দোয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের জাতীয় সমাবেশ ছিল দলটির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পরীক্ষা। ব্যাপক জনসমাগম এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দলটির সাংগঠনিক শক্তির প্রমাণ দিয়েছে। তবে দলটির আমিরের অসুস্থতা নতুন করে নেতাকর্মীদের উদ্বিগ্ন করেছে। সমাবেশ শেষে শফিকুর রহমানের শারীরিক অবস্থার অগ্রগতি নিয়ে দলীয় সূত্র নিয়মিত আপডেট দিচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ