
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রকার অনিশ্চয়তা নেই—এ কথা দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, নির্বাচন প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া সময়সূচি অনুযায়ীই অনুষ্ঠিত হবে এবং সে অনুযায়ীই সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শনিবার (১৯ জুলাই) কুমিল্লার বার্ডের ময়নামতি অডিটোরিয়ামে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন শফিকুল আলম। তার বক্তব্যে নির্বাচনকে ঘিরে চলমান নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান টানার আভাস মেলে।
শফিকুল আলম বলেন, “নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের অনিশ্চয়তা নেই। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে সরকার যে সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন, তার মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন হবে অতীতের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে ভালো এবং অংশগ্রহণমূলক। সকল রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হবে।”
প্রেস সচিব আশ্বস্ত করেন, নির্বাচন আয়োজনের জন্য যেসব রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও নিরাপত্তাগত প্রস্তুতি দরকার, সেসবই সরকারের নিকট অগ্রাধিকারভিত্তিতে বিবেচিত হচ্ছে।
সংসদীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (Proportional Representation বা PR) পদ্ধতি চালু হবে কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে শফিকুল আলম জানান, “এ বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশন একসঙ্গে আলোচনা করছে। একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও আধুনিক পদ্ধতির নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করছে।”
তিনি আরও বলেন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি এখন শুধু ধারণা নয়—এটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে এবং নীতিনির্ধারকদের মধ্যে অনেকেই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছেন।
প্রেস সচিবের বক্তব্যে দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও আশ্বস্ত হওয়ার মতো তথ্য উঠে আসে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের নানা প্রান্তে ঘটে যাওয়া স্পর্শকাতর ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, “এমন কোনো ঘটনা নেই যেখানে অপরাধী ধরা পড়েনি। আমরা প্রতিটি ঘটনার পরপরই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি। অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে এবং এই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।”
তিনি যোগ করেন, “আমরা চাই কেউ যেন আইনের ঊর্ধ্বে না থাকে। আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলছে। সরকার কোনো পক্ষকে রাজনৈতিক বিবেচনায় সুবিধা বা অসুবিধা দিচ্ছে না।”
সম্প্রতি গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে ঘিরে সহিংসতা ও হামলার ঘটনায় সরকার পক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, “গোপালগঞ্জের মানুষও বাংলাদেশের নাগরিক। সরকার তাদের কোনো ধরনের বৈষম্যের মধ্যে ফেলছে না। তবে কেউ যদি আইন নিজের হাতে তুলে নেয়, রাষ্ট্র তাকে ছাড় দেবে না। ইতোমধ্যেই অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।”
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমার আহ্বান—আপনারা গোপালগঞ্জে গিয়ে নিজেরা দেখে আসুন। সরকার নিয়মতান্ত্রিক ও আইনের সীমার মধ্যেই সব কিছু করছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো ঠিক নয়।”
এই মন্তব্যগুলো শোনার পটভূমি ছিল এক আন্তর্জাতিক উদ্ভাবনী আয়োজন—‘টেডএক্স কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি’। “The Next Wave” বা “পরবর্তী ঢেউ” প্রতিপাদ্য নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে নতুন ভাবনা, উদ্ভাবনী শক্তি ও ভবিষ্যতের নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হায়দার আলী, খ্যাতনামা এসট্রো ফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন, চরকির সিইও রেদওয়ান রনি, লেখক ডেল এইচ খান, জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর, সংবাদ উপস্থাপক ফারাবি হাফিজমহ অন্যান্যরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এ আয়োজন হয়ে ওঠে এক জ্ঞান, অনুপ্রেরণা ও নেতৃত্বের মিলনমেলা। আর এই মঞ্চেই দেশের নির্বাচন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেন শফিকুল আলম।
সব মিলিয়ে, সরকারের পক্ষ থেকে বার্তাটি স্পষ্ট: নির্বাচন হবে, নির্ধারিত সময়েই হবে এবং তা হবে অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ এবং আইনের শাসন বজায় রেখে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ