ছবি: সংগৃহীত
দেশে উৎপাদিত চিটাগুড়ের বিক্রি বাধাগ্রস্ত হওয়া এবং রাষ্ট্রীয় স্বার্থে বৈদেশিক মুদ্রার অপ্রয়োজনীয় অপসায়ন বন্ধ করতে চিটাগুড় আমদানিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো এক বিস্তারিত চিঠিতে উল্লেখ করেছে যে, দেশে পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও এবং নতুন মাড়াই মৌসুম শুরু হয়ে যাওয়ার পরও বিদেশ থেকে চিটাগুড় আমদানি চলতে থাকলে সরকারি চিনিকলগুলোর উৎপাদিত উচ্চমানের পণ্যের বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা কেবল রাষ্ট্রীয় শিল্পকেই আর্থিকভাবে দুর্বল করে তুলছে না, বরং সরকারের জন্য রাজস্ব ক্ষতির আশঙ্কাও তৈরি করছে।
চিঠিতে বিএসএফআইসি বিস্তারিত উল্লেখ করে যে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি আখ থেকে চিনি, চিটাগুড়, প্রেসমার্ড ও ব্যাগাছ উৎপাদন করে থাকে, যা দেশের একমাত্র সরকারি বৃহৎ পরিসরের উৎপাদন কেন্দ্র। প্রতি বছর নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত মাড়াই মৌসুমে কাঁচা আখ সংগ্রহ করে এগুলো উৎপাদন করা হয়। স্বাস্থ্যসম্মত, কেমিক্যালমুক্ত এবং দীর্ঘদিনের ভোক্তা আস্থা পাওয়া এই চিটাগুড় স্থানীয় বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয়।
২০২৪–২৫ মাড়াই মৌসুমে উৎপাদন শেষ করে বর্তমানে সরকারি চিনিকলগুলোতে প্রায় ১৯ হাজার ৬৮৫ টন চিটাগুড় মজুত রয়েছে। এরই মধ্যে ২০২৫–২৬ মৌসুমের আখ মাড়াই শুরু হয়েছে, যেখানে আনুমানিক ৮ লাখ ৫০ হাজার টন আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যে আরও প্রায় ৩২ হাজার ১৩০ টন চিটাগুড় উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের জন্য বর্তমানে পর্যাপ্ত এবং ভবিষ্যৎ সরবরাহেরও নিশ্চয়তা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিদেশ থেকে শুল্কমুক্ত বা কম শুল্কে আমদানি কেবল বাজারে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে বলেই মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।
চিঠিতে বিএসএফআইসি অভিযোগ করে যে, কিছু ব্যবসায়ী শুল্কমুক্ত বা ন্যূনতম শুল্ক সুবিধার সুযোগ নিয়ে ভারত, পাকিস্তান ও নেপাল থেকে ব্যাপকভাবে চিটাগুড় আমদানি করছে। অনেক ক্ষেত্রে গোখাদ্য হিসেবে দেখিয়ে আমদানি শুল্ক পরিশোধ করা থেকে বিরত থেকেও বাজারজাত করা হচ্ছে, যা সরাসরি রাজস্ব ফাঁকি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে, বেসরকারি চারটি ডিস্টিলারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ক্ষুদ্র খামারিদের চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে বিদেশি চিটাগুড় সরবরাহের নামে এই আমদানি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এর ফলে সরকার একদিকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে, যা চলমান বৈদেশিক মুদ্রার সংকটকালীন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
চিঠিতে বলা হয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ইতোমধ্যে এনওসি বা অনাপত্তি প্রদান সীমিত করার কারণে কিছুটা হলেও বিএসএফআইসির উৎপাদিত চিটাগুড়ের চাহিদা বেড়েছে। তবে নতুন মাড়াই মৌসুম শুরু হওয়ায় বাজারে স্বাভাবিক বিক্রির গতিধারা বজায় রাখতে হলে এই সময়ে কোনোভাবেই নতুন আমদানি অনুমোদন দেওয়া উচিত নয়।
বিএসএফআইসি মনে করে, যদি এখন আমদানি এনওসি প্রদান করা হয়, তাহলে অসম প্রতিযোগিতার কারণে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পণ্যের চাহিদা কমে যাবে। এতে কেবল সরকারি শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, বরং দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে।
চিটাগুড় বিক্রয় নীতিমালায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীন বিভিন্ন খামারগুলো টেন্ডারে অংশগ্রহণ ছাড়াই চিনিকলগুলো থেকে তাদের প্রয়োজনীয় চিটাগুড় সংগ্রহ করতে পারে। ফলে বিদেশি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
চিঠিতে বিএসএফআইসি মত দেয় যে, দেশের স্বার্থ রক্ষা, বিদেশ থেকে অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি হ্রাস, বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখতে হলে চিটাগুড় আমদানিতে ন্যূনতম বা শূন্য শুল্ক সুবিধা সাময়িকভাবে বন্ধ করতে হবে।
এছাড়া আমদানিকারকদেরকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিএসএফআইসির চিটাগুড় ক্রয়ে উৎসাহিত করতে প্রণোদনা, নির্দেশনা বা বিশেষ নীতিগত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এর ফলে দেশীয় শিল্প বিকশিত হওয়ার পাশাপাশি সরকারও লাভবান হবে, আর বাজারে কৃত্রিম সংকট বা মূল্য অস্থিরতার সম্ভাবনা কমে আসবে।
বিএসএফআইসি মনে করে, আমদানি নিরুৎসাহিত করতে হলে এনওসি প্রদানে কড়াকড়ি, শুল্ক সুবিধা সীমিতকরণ, এবং আমদানির নামে রাজস্ব ফাঁকির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এখন জরুরি। দেশের অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনীয়তা ও শিল্পসুরক্ষার স্বার্থে এটি অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ হতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটি এনবিআরের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে—এখনই প্রয়োজনীয় নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কৃষক, ক্ষুদ্র খামারি এবং দেশের অর্থনীতিকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে।
বাংলাবার্তা/এসজে
.png)
.png)
.png)



