ছবি: সংগৃহীত
সরকার বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) মাধ্যমে রাজধানীতে ৪০০টি বৈদ্যুতিক বাস চালু করতে যাচ্ছে। পাশাপাশি, বাস মালিকদেরও বৈদ্যুতিক বাস আমদানি করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। বেসরকারিভাবে আমদানি হলে সরকার কর মওকুফের পরিকল্পনা করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগে বাণিজ্যিক রিকন্ডিশন্ড বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান বা প্রাইম মুভার আমদানির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ছিল পাঁচ বছর। গত ৩১ আগস্ট এক সভায় বাস মালিকদের চাপে তা বাড়িয়ে ১২ বছর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পুরোনো মোটরযান আমদানি করলে বায়ুদূষণ এবং বর্জ্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক বাস আমদানি করা যেতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, তারা পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এজন্য বৈদ্যুতিক বাস আমদানিতে করছাড়ের বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। আগামী অর্থবছর থেকে এ উদ্যোগ কার্যকর হতে পারে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি এম এ বাতেন জানিয়েছেন, বৈদ্যুতিক বাসের দাম প্রায় ৩ কোটি টাকা এবং এগুলোর আয়ুষ্কাল তিন থেকে চার বছর। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আমদানি করলে কর মওকুফের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। এতে কর মওকুফের পরও বাসের দাম প্রায় ২ কোটি টাকা হবে। তিনি আরও জানান, পুরনো বাস আমদানি করতে হলে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক দুই দেশের পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। সমিতি বিশেষভাবে জাপান ও ইউরোপ থেকে পুরনো গাড়ি আমদানির কথা উল্লেখ করেছে।
বুয়েটের পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হক সরকারের নীতি সমালোচনা করেছেন, কারণ এখনও জীবাশ্ম জ্বালানিচালিত যানবাহনকে বেশি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি দূষণ সৃষ্টি করছে ডিজেলচালিত বাণিজ্যিক যানবাহন। চীন ও ভিয়েতনামের মতো অনেক দেশে বৈদ্যুতিক যানবাহনকে জাতীয় অগ্রাধিকারে রাখা হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশ এই ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে। এ অর্থবছরের বাজেটে অবশেষে বৈদ্যুতিক যান ও ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার উৎপাদনে সুবিধা দেয়া হয়েছে, যা আগে শুধুমাত্র জীবাশ্ম জ্বালানিচালিত যানবাহনের জন্য প্রযোজ্য ছিল। তবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক দেরিতে হয়েছে। শামসুল হক আরও বলেন, সরকার নিজে কিছু বৈদ্যুতিক যান কিনলে বাজার পরিবর্তন হবে না। বেসরকারি খাত যেন গ্রিন মোবিলিটিতে (দূষণমুক্ত যানবাহনে) মুনাফা দেখতে পায়, সেজন্য উপযুক্ত নীতিমালা থাকা জরুরি। দেশে ডিজেলচালিত বাস আমদানিতে ১৫-৩৭ শতাংশ শুল্ক থাকলেও বৈদ্যুতিক বাস আমদানিতে শুল্ক ৫৮ শতাংশের বেশি, যা বড় বাধা। নীতিগত পরিবর্তন ছাড়া সরকারের ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ বৈদ্যুতিক যান ব্যবহারের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চলতি মাসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, অক্টোবর মাসে দেশে ৪৮৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৪৪১ জন নিহত এবং ১,১২৮ জন আহত হয়েছেন। গত সেপ্টেম্বরে দৈনিক গড়ে ১৩.৯ জন মারা গিয়েছিলেন, অক্টোবরে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে গড়ে ১৪.৭ জন হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দুর্ঘটনার বড় একটি কারণ হল নিম্নমানের মোটরযান। তবে পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক যান যত বেশি চলাচলের সুযোগ পাবে, ততই সড়ক নিরাপত্তা উন্নত হবে। এজন্য বেসরকারিভাবে এসব বাস আমদানির জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ১২ বছরের পুরোনো গাড়ির জীবনকাল প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকে। এমন গাড়ি কোনোভাবেই আমদানি করা ঠিক হবে না। পরিবেশের জন্য বৈদ্যুতিক বাস আমদানির উদ্যোগ অনেক ভালো। এজন্য সরকারকে অবকাঠামো তৈরি করতে হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



